সুনামগঞ্জে রেললাইন নিয়ে যাওয়া নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দ্বন্দ্বের গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বলেছেন, ‘ছোট্ট একটি ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।’
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
সুনামগঞ্জের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না উল্লেখ করে তিনি এও স্বীকার করেন যে, রেলপথ মন্ত্রীকে চাহিদাপত্র পাঠানোর আগে তার অবশ্যই মান্নানের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।
সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে ‘দুই মন্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণে সিলেটের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে’ বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর দুই মন্ত্রী ফেসবুকে এ নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন।
দুই মন্ত্রী কেন একান্তে সমস্যা না মিটিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে কথা বলছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মান্নান আমার বন্ধু, তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অটুটু রয়েছে। ঘটনাটি হল, আমরা কানেক্টিভিটি চাই। কিন্তু ঢাকা-সিলেট রেলপথ অত্যন্ত পুরোনো- রদ্দি মার্কা। সরকার এটিকে ব্রডগেজ করতে পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু রেলমন্ত্রী বলেছেন এটিতে অনেক খরচ হবে। কারণ সিলেটে শেষ প্রান্ত সেখানে ডিপো করতে হবে।’
নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কেন পাশের জেলা সুনামগঞ্জে রেল লাইন নিয়ে যাওয়া নিয়ে রেলপথ মন্ত্রীকে চাহিদাপত্র বা ডিও লেটার দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যাও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এনিয়ে সুনামগঞ্জের ৫ জন সংসদ সদস্য আমার সঙ্গে দেখা করে, এ রেললাইনটি ছাতক পর্যন্ত নিয়ে যেতে রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চিঠি দেন। ডিপোটি সেখানে প্রতিস্থাপন করলে খরচ কম হবে। আমি এ বিষয়ে সরল মনে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দেই। কিন্তু আমি তো সুনামগঞ্জের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে জানি না। চিঠিটা দেয়ার আগে মান্নানের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।’
মোমেন ও মান্নার দীর্ঘদিনের বন্ধু। আর ওই ডিও লেটার দেয়া নিয়ে সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে কি না, এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘মান্নানের সঙ্গে দেখা হলে আমার পাশে বসে বলেছে, তাকে তো আমি ফোন করে তাদের আসার কথা বলতে পারতাম। এটি না করেই ডিও লেটার পাঠিয়ে দিলাম। এর মধ্যে আমি যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছি। তারপরেই এনিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।’
‘ওর সঙ্গে দেখা হলে আমি আলাপ করব এ নিয়ে’- পরিকল্পনামন্ত্রীর মান ভাঙাতে উদ্যোগ থাকবে জানিয়ে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে মান্নানের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘তাকে সরি বলছি।’
সুনামগঞ্জে রেল নিয়ে যেতে রেলপথ মন্ত্রীকে চাহিদাপত্র দেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যা
যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানকালে গত সপ্তাহে ফেসবুকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, ‘মান্নানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৫০ বছরের বেশি। আমি এবং মান্নান সুখে দুঃখে সবসময়ই ছিলাম এবং আছি, ভবিষ্যতেও আমৃত্যু থাকব বলেই আশা করি। দুঃখজনক যে সিলেটের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে দেখলাম আমার এবং মান্নানের মধ্যে নাকি দ্বন্দ্ব রয়েছে, এবং এই দ্বন্দ্বের কারণে নাকি সিলেটের অনেক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে! কে বা কারা এই সংবাদটি প্রচার করছেন জানি না তবে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। যে বা যারা এটি প্রচার করছেন তারা হয়তোবা কোনো বিশেষ বা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করছেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না তবে একটি বিশেষ কারণে দিচ্ছি আর তা হল আমার এবং মান্নানের স্থানীয় অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন আর তাদের মধ্যে যাতে কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পরিকল্পনা মন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিক্রিয়া
তবে এই স্ট্যাটাস ভালোভাবে নেননি পরিকল্পনামন্ত্রী। তার দপ্তর থেকে দেয়া আরেক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সুনামগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেললাইন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। ওই স্ট্যাটাসে দুই জনের মধ্যে দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এই বিষয়ে তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ভূমিকা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘এটা সত্য যে ড. মোমেনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘ ৫০ বছরের। কিন্তু তিনি সুনামগঞ্জের পাঁচ সংসদ সদস্যের পাশে রয়েছেন উল্লেখ করে রেলমন্ত্রীর কাছে যে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন, তা আমাকে বিস্মিত করেছে। তিনি যে পাঁচ এমপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে জাতীয় পার্টির এমপিও রয়েছেন। তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ভালো করেই জানেন, আমিও সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য। সুনামগঞ্জের সঙ্গে রেল সংযোগের বিষয়ে তার মতো আমিও অবগত আছি। আমি এ বিষয়ে তার চেয়ে বেশি জানি। আমি মনে করি, তার বর্ণিল জীবনে তিনি কখনো সুনামগঞ্জে যাননি। সুনামগঞ্জে কখনো তার পা পর্যন্ত পড়েনি। কোনো একটি পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়ে অন্য কেউ হলে এই পরিস্থিতিতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধুত্ব এবং একই সঙ্গে আমরা দুজনই মন্ত্রিসভার সদস্য, তাই এ বিষয়টি (রেলমন্ত্রীকে ডিও লেটার) কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’