মানিকগঞ্জ সদর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহজাহান শেখ। সকালে অফিসে যেতে এক ঘণ্টা স্ট্যান্ডে বসে থেকেও দেখা পাননি গাড়ির। কিন্তু এরপরও আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অফিসে যাওয়ার মতো কোনো পরিবহন পেয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঢাকা থেকে পাশের জেলা মানিকগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শাহজাহানের মতো অনেককে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি তারা। উপায়ান্তর না দেখে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তাদের কেউ কেউ।
ঢাকাকে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। মানিকগঞ্জ ছাড়াও পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন।
পাশাপাশি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ীতেও কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
ভাইরাসের বিস্তার রোধে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করায় বিভিন্ন জেলায় অফিসগামী লোকজন পড়েন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। কর্মজীবী নারীদের দুুর্ভোগ আরও বেশি।
অল্প কিছু যানবাহন চললেও সেগুলোতে ভাড়া ছিল অত্যধিক। এতে বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ।
মানিকগঞ্জ বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে সকাল থেকে যাত্রীদের অন্তহীন অপেক্ষার কথা জানা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে তাদের অনেকে হেঁটে, রিকশা ভ্যানে করে, খোলা ট্রাক ও মোটরসাইকেলে কর্মস্থলের দিকে ছুটেছেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে দুই সন্তান নিয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন রিনা পাল। ছবি: নিউজবাংলা
তবে জেলা শহরের আশপাশের অফিসের লোকজন হেঁটেই কর্মস্থলে গেছেন। বাসগুলোকে টার্মিনালে অচল বসে থাকতে দেখা গেছে।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পর রিনা পাল বলেন, ‘জরুরি একটা কাজের জন্য আরিচা যেতে হবে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছি গাড়ির জন্য। কিন্তু কোনো গাড়ি নাই।
‘এমনকি সিএনজিও পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হেঁটেই রওনা দিলাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার বাসা মানিকগঞ্জে। আমি সাভারের একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। অফিসে যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না।
‘লকডাউন দিছে ভালো কথা। কিন্তু দেখুন লকডাউনও চলছে। আবার আমাদের ব্যাংকও খোলা আছে। এই ভোগান্তি সমাধান করা উচিত।’
মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে সাভারের হেমায়েতপুর যাচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি একটা কাজের জন্য হেমায়েতপুর যাচ্ছি। অনেক কষ্ট করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশা ও মোটরসাইকেলে করে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এলাম।
‘আরিচা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত আসতে ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মানিকগঞ্জে এসে দেখি সব বাস টার্মিনালে রয়েছে।’