ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে অভিনেত্রী পরীমনির হেনস্তার শিকার হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ আনার ঘটনাকে ‘একটি বাজে বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ঘটনাগুলো জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কি না সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি বাজে বিষয়। আমি এটি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে কেউ হেনস্তার শিকার হওয়া ঠিক নয়, আর কেউ অহেতুক হয়রানি হওয়া ঠিক নয়।’
ঘটনাগুলো জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে মধ্যরাতে কোথায় গিয়ে কে মদ্যপান করল আর সেখানে মদ্যপান করতে গিয়ে ভাঙচুর হলো। সেই ভাঙচুরের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে কিছু ঘটনা ঘটলো। এটা কি জাতির জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’
এ ঘটনার আলোচনা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেটি (পরীমনি ইস্যু) নিয়ে আমি দেখলাম যে যেভাবে সবাই মত্ত হয়ে গেল, সেটি কি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল?’
পরীমনির ঘটনায় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আনা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে বক্তব্য রেখেছেন বিএনপিদলীয় গ্রুপের নেতারা। আমার কাছে মনে হল তার কাছে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও ওই চিত্রনায়িকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই এটা নিয়ে তিনি সেখানে বেশ কয়েকদিন বক্তব্য রেখেছেন।’
বাংলাদেশ এখন ঋণদাতা
এসময় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়েও কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তুলে ধরেন গত ১২ বছরে বদলে যাওয়ার গল্প।
‘একসময় যে দেশের বাজেট নির্ভর করতো প্যারিস কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ের ওপর, অর্থমন্ত্রীকে ছুটে যেতে হতো প্যারিস কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে। সেই বাংলাদেশ এখন অন্য দেশকে ঋণ দেয়।
‘ইতোমধ্যে আমরা শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ১০ বছর মেয়াদে ঋণ দিয়েছি। অন্যান্য দেশও ঋণ চাচ্ছে। সেখানেও দেয়া হচ্ছে। দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
আর কোনো দেশ বাংলাদেশ থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে অর্থনৈতিক বিভাগ কাজ করছে। আফ্রিকার দু একটি দেশ আছে। এটা নিয়ে তারা কাজ করছেন। এগুলো যেহেতু এখনও প্রক্রিয়াধীন এটি নিয়ে মনে হয় এখনও বলার সময় আসেনি।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ-ফাইল ছবি
দেশবিরোধী অপপ্রচার থেমে নেই
দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলেও অপপ্রচার থেমে নেই বলেও আক্ষেপ করেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বিশ্বের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে পঞ্চমুখ থাকলেও দেশের কিছু গণমাধ্যম উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত বলেও জানান তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের দু-একটি পত্রিকায় আমরা দেখতে পাই, এ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। এই অগ্রগতি কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা চালানো হয়। এই অপচেষ্টা আজকে হচ্ছে তা নয়। এই অপচেষ্টা গত ১২ বছর, সাড়ে ১২ বছর ধরে হচ্ছে। এ সত্ত্বেও দেশ এগিয়েছে।’
বর্তমান সরকারের অধীনে গত ১২ বছরে মানুষের জীবন যাত্রা অনেক বদলে গেছে বলেও দাবি তথ্যমন্ত্রীর।
‘যে পরিবর্তন দৃশ্যমান সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সমীচিন নয়। আমি এজন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, অবশ্যই সরকারের বা কোনো দায়িত্বশীলের ব্যর্থতা, ত্রুটি সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, খবর হবে। কিন্তু পাশাপাশি অগ্রগতিও মানুষকে জানাতে হবে।’
মন্ত্রীর তার এ বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘কারন মানুষ যখন দেশকে নিয়ে আশাবাদী হবে না, তখন দেশ এগোবে না, সমাজ এগোবে না। আশাহীন মানুষ যেমন এগোতে পারেনা আশাহীন সমাজও এগোতে পারে না।’
অপপ্রচারকারীদের নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও তার মিত্ররা অপচেষ্টা চালায়। আবার বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা মনে করেন তারা মহা জ্ঞানী এবং অপরের ভুল না ধরলে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করা যায় না। এ ধরনের কিছু ব্যক্তিবর্গ আছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে আছে, যারা দেশের কোনো অগ্রগতি দেখতে পায় না।’
সরকারের কট্টর সমালোচক হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর দরকার আছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘শুধুমাত্র দেশের সমালোচনাতে ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই দরকার আছে। তারা কোন জায়গায় কোন ব্যত্যয় হলে সমালোচনা করবে। কিন্তু একই সঙ্গে দেশের অগ্রগতি, জনগণের অর্জন নিয়ে প্রশংসা করাও দায়িত্ব।’