রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৩ দিন চিকিৎসা শেষে বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদার বাড়ি ফেরা উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যা থেকে হাসপাতালের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। রাত ৮টা ১০ মিনিটে সাদা একটি প্রাইভেট কারে করে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। উঠবেন গুলশানে নিজের বাসভবন ফিরোজায়।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দ্বিতীয় তলায় একটি রুমে চিকিৎসা চলছিল বিএনপি নেত্রীর।
গত ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। এরপর ফিরিয়ে আনা হয় গুলশানের বাসভবনে। অবস্থার অবনতি হলে ২৭ এপ্রিল একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপি-প্রধানকে। সেই থেকেই হাসপাতালে আছেন তিনি।
গত ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপি থেকে খালেদা জিয়ার করোনামুক্তির খবর দেয়া হয় ৯ মে। কিন্তু দল থেকে বলা হচ্ছিল, অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে তার।
সিসিইউতে থাকা অবস্থায় গত ২৮ মে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। গত ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কেবিন ফিরিয়ে আনা হয়।
হাসপাতালে নেয়ার কিছুদিন পর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিবার ও দল। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয় বিএনপি ও খালেদার পরিবারের।
নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়নি সরকার। জানানো হয়, বিএনপি নেত্রী একাধিক দণ্ডিত মামলার আসামি হওয়ায় আইন অনুযায়ী তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা পাওয়া বিএনপি নেত্রীকে ২০২০ সালের মার্চে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয় দণ্ড স্থগিত করে। তাকে মুক্ত করতে বিএনপির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর আছে আবেদন করা হলে তিনি নির্বাহী আদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড স্থগিত করার ব্যবস্থা করেন।
প্রথমে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হলেও পরে দুই দফায় আরও ছয় মাস করে সময় বাড়ানো হয়।
এই মুক্তির ক্ষেত্রে দুটি শর্তের কথা জানানো হয়েছে সরকার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে। জানানো হয়েছে, বিএনপি নেত্রীকে চিকিৎসা নিতে হবে দেশেই আর তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
প্রকাশিত শর্তের বাইরে আরও শর্ত থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণ। কারণ, মুক্তির পর এক বছরেও বিএনপি নেত্রী রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলেননি, কোনো বক্তব্য, বিবৃতি দেননি।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার বাতজ্বর, হাঁটুর ব্যথা, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে।