বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ত্ব-হার যে তথ্য এখনই জানাতে চায় না পুলিশ

  •    
  • ১৮ জুন, ২০২১ ২৩:২৩

‘একটা অপরাধের পেছনে প্রথম দেখতে হয় ইনটেনশন আছে কি না, খারাপ ইনটেনশন আছে কি না। এ রকম যদি আমরা ইনটেনশন খুঁজে পাই, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে খারাপ ইনটেনশন আসে নাই যে, দেশকে বিব্রত করা বা সরকারকে অস্থিতিশীল করা বা অন্য কোনো কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে কি না।’

আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের ‘আত্মগোপনের’ তথ্য জানালেও কিছু প্রশ্নের জবাব এখনই খুলে বলতে চাইছে না পুলিশ।

এই ইসলামি বক্তা গত আট দিন গাইবান্ধায় কোথায়, কার কাছে ছিলেন, সেটি ব্রিফিং করে জানিয়েছেন রংপুরের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

তবে কেন সেখানে থেকেছেন, কী উদ্দেশ্যে তিনি ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাব তিনি ‘এখনই’ দেবেন না বলেছেন।

বলা হচ্ছে, ত্ব-হা গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে নিখোঁজ হন। তার ভক্ত, অনুসারীরা অনেক কথা বলাবলি করছিল। কেউ বলছিল, ইহুদিবাদীদের সমালোচনা করায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে ইসরায়েল। কেউ বলছিল, এর পেছনে হাত ভারতের। কেউবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, কেউবা পুলিশের দিকে আঙুল তুলছিলেন।

শুক্রবার দুপুরে খবর আসে, ত্ব-হা রংপুর শহরে তার প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি ফিরেছেন। পুলিশও যায় সেখানে, তাকে নিয়ে আসে ওই বাড়ি থেকে। আনা হয় রংপুর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।

সন্ধ্যার আগে আগে ব্রিফিংয়ে আসেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

রংপুর ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ত্ব-হার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘প্রাইমারিভাবে যে বিষয়টি জেনেছি তা হচ্ছে, তাদের (ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা) ব্যক্তিগত কিছু কারণে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিল।’

কী সেই ব্যক্তিগত কারণ, এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ব্যক্তিগত কারণ, আমরা সেটি এখনই পাবলিকলি না বলি। আগে ভেরিফাই করতে হবে। তবে কোনো অপরাধ ঘটেনি বলে আমাদের তারা জানিয়েছে।’

এখন পুলিশের পদক্ষেপ কী হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেব। তাদের আদালতে তোলা হবে। আদালতে যেভাবে তারা জবানবন্দি দেবে, সে অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

‘সরাসরি গাইবান্ধায়’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ত্ব-হা তার নিখোঁজের খবর জানাজানি হওয়ার দিনই গাইবান্ধায় আসেন। এর মাঝে অন্য কোথাও ছিলেন না।

তার ভাষ্যমতে, গাইবান্ধার তিনমাথা এলাকায় বন্ধু শিহাবের বাসায় ছিলেন। তবে শিহাব বাসায় ছিলেন না। যেখানে শুধু তার মা থাকেন। তারা শুক্রবার রংপুর ফেরেন।

বাসায় এমন একজন আছেন, যাকে নিয়ে কয়েক দিন ধরে তোলপাড়। অথচ কেউ কিছু বুঝতে পারলেন না?

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘শিহাবের মা বৃদ্ধ। জাতীয়, আন্তর্জাতিক খবর রাখে না। টিভিও নাই বাসায়। কোনো কিছু তারা আঁচও করে নাই।’

তার দাবি, ত্ব-হা সঙ্গে থাকা তিন সঙ্গীকে বলেন, ‘ভাই, এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে আমাকে এ রকম কয়েক দিন হেল্প করো। আমরা কয়দিন ওখানে থাকি। আমরা একটু ফায়দা করতে পারি।’

তবে কী ফায়দা করতে চেয়েছিলেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব আসেনি পুলিশের কাছ থেকে।

ত্ব-হাকে কীভাবে নিয়ে আসা হয়, তার বর্ণনা দিয়ে মারুফ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি, ত্ব-হা চারতলা মোড় এলাকায় আছে। পরে আমরা তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার সফর সঙ্গী আমীর উদ্দিন ও জায়গীরহাটের মুহিতকে নিয়ে আসি।

‘আর একজন হলো ফিরোজ। সে আছে বগুড়াতে। আমরা যোগাযোগ করেছি। সংশ্লিষ্ট থানা তাকে নিয়ে আসবে।’

কারা ফলো করছিল?

গত মঙ্গলবার ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমার স্বামী আমাকেও জানিয়েছেন যে, দুই মোটরসাইকেল আরোহী তাকে ফলো করছে। খুব চিন্তিত ছিলেন তিনি।’

ত্ব-হার মা আজেদা বেগম জানান, ছেলে তাকে বলেছেন, বেশ কদিন ধরে দুই অপরিচিত ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করছে। এ নিয়ে জীবন শঙ্কায় আছেন তিনি। তারা তার ক্ষতি করতে পারে। ঢাকায় গেলে তিনি নিরাপদে থাকবেন।

একটি ইমো আইডি থেকে ত্ব-হার কাছ থেকে টাকাও চাওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ তার।

নিখোঁজের ৮ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে। ছবি: নিউজবাংলা

সেই দুজন কে, কোন নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন রাখা হয় আবু মারুফের কাছে।

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা কথা (ত্ব-হার সঙ্গে) বলেছি, সে বলেছে, ‘এটা আমার কাছে সন্দেহমূলক মনে হয়েছে’। আমি বলেছি, এ রকম যদি হয়ে থাকে তাহলে বিচার-টিচার, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, আপনাদের কোন কথা বলেছে কি না…। তখন ত্ব হা বলেছে, ‘না, একটু এগিয়ে আরেক মোড়ে গিয়ে দেখি, না, তারা আর নাই’।”

তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের বিষয়টি তার ওয়াইফও ফেসবুক লাইভে বলেছে, ভুয়া নম্বর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারাও চেষ্টা করেছে এটা কিন্তু পায় নাই। এটা হচ্ছে, অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটলে কিছু ফ্রড থাকে, যারা বিভিন্নভাবে এই কাজগুলো করার চেষ্টা করে।’

পুলিশকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আবু মারুফ বলেন, ‘এটা উদ্দেশ্যমূলক না। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, সরকারকে বা দেশের মানুষকে এত কিছু ভেবে তারা এটা করেনি।’

ফোন বন্ধ কেন

ত্ব-হার মোবাইল ফোন বন্ধের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সে শিক্ষিত ছেলে, প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সে জানে। সে জানে, এই মোবাইল ফোন যদি অন থাকে, তাহলে কোনো না কোনোভাবে আমাকে ট্রেস করবে। সেই উদ্দেশ্যে সে আসলে সুইচ অফ করে।’

এখন ত্ব-হাকে নিয়ে কী করা হবে

আবু মারুফ বলেন, ‘এদের আমরা আপাতত থানায় রাখব। মামলায় যাওয়ার মতো আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো এভিডেন্স আসেনি। যদি মামলায় যাওয়ার মতো কোনো বিষয় আসে, তাহলে আমরা পরবর্তী সময়ে দেখে নেব।

‘আজ আমরা তাদের থানায় রাখব। বিষয়গুলো যাচাই-বাচাই করব। এরপর প্রয়োজন হলে আদালতের সঙ্গে কমিউনিকেট করব।’

তিনি বলেন, ‘একটা অপরাধের পেছনে প্রথম দেখতে হয় ইনটেনশন আছে কি না, খারাপ ইনটেনশন আছে কি না। এ রকম যদি আমরা ইনটেনশন খুঁজে পাই, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে খারাপ ইনটেনশন আসে নাই যে, দেশকে বিব্রত করা বা সরকারকে অস্থিতিশীল করা বা অন্য কোনো কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে কি না।’

পুলিশ এতদিন কি চেষ্টা করেছে?

এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের পুলিশ ইউনিট তাদের খুঁজছি। আমরা সবাই তৎপর ছিলাম, এতে কোনো টাইমফ্রেম নেই। আমরা যাদের প্রযুক্তির সাহায্যে পেয়ে যাই বা ম্যানুয়ালে পেয়ে যাই, তাহলে সেটা দ্রুত হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর