ত্ব-হার খোঁজ নেই। প্রথমে বিষয়টি জানান দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহারই। থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার চেষ্টা, সেটি নেয়া হচ্ছে না বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন করে ‘ত্ব-হাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, না হলে তার কাছে আমাকে নিয়ে যান’ বলে আবেগপ্রবণ বক্তব্য দিলেও স্বামীর খোঁজ পাওয়ার পর তিনি এ প্রসঙ্গে এখন কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না। তার কাছেও এখনই যেতে চাইছেন না।
গত ১০ জুন রাতে রংপুর থেকে ত্ব-হা আসছিলেন ঢাকা। সঙ্গে দুজন, আর গাড়িচালক। রাত ২টা ৩৮ মিনিটের পর ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সাবিকুন্নাহার।
দুই দিন ধরে নানা জল্পনা-কল্পনার পর পরিবারটি অভিযোগ করতে থাকে, পল্লবী থানা সাধারণ ডায়েরি নেয়নি।
তবে এ ঘটনায় একটি ডায়েরি হয় রংপুরে। ত্ব-হার মা আজেদা বেগম সাধারণ ডায়েরি করেন রংপুর থানায়। সেখানেই তার বাড়ি। আর সেই সূত্র ধরে তদন্ত করতে থাকে পুলিশ।
তার অন্তর্ধানের বিষয়টি তুমুল আলোচনা তৈরি করে সারা দেশে। অনুসারীরা অভিযোগ করতে থাকেন, দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে তুলে নিয়েছে। তবে আট দিন পর তিনি ফেরেন রংপুরে তার প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখেন। পরে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসে তাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, ত্ব-হা গাইবান্ধায় তার এক বন্ধুর বাসায় ছিলেন।
তার অন্তর্ধানের চেয়ে বেশি আলোড়ন তোলে তার ফিরে আসার বিষয়টি। গণমাধ্যমগুলোতে আসতে থাকে ‘ব্রেকিং নিউজ’।
দুই দিন আগে সাবিকুন্নাহার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসেন সংবাদ সম্মেলনে। পরে বেসরকারি টেলিভিশনে দিতে থাকেন সাক্ষাৎকার। আকুতি জানাতে থাকেন ত্ব-হাকে ফিরিয়ে দিতে।
দুপুরে রংপুর শহরে আবহাওয়া অফিসের কাছে শ্বশুর বাড়ি থেকে ত্ব-হাকে নিয়ে আসে পুলিশশুক্রবার দুপুরে ত্ব-হা ফিরে আসার পর কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় সাবিকুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে নিউজবাংলা। তবে এই চেষ্টাটা সহজ ছিল না।
দুপুর থেকে তার ফোনে কখনও কল যাচ্ছিল না, কখনও পাওয়া যায় ব্যস্ত। পরে মিরপুর-১১ নম্বরের ‘এ’ ব্লকের একটি বাসায় যায় নিউজবাংলা।
এই বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ১৪ জুন ত্ব-হাকে উদ্ধারের আবেদন করে চিঠি দেয়া হয়।
তবে সেই বাসায় থাকেন না সাবিকুন্নাহার। সেটি নারীদের একটি কওমি মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন সাবিকুন্নাহার এবং তার বোন। এই মাদ্রাসায় কখনও আসেননি ত্ব-হা। শুক্রবার থাকায় মাদ্রাসাটি বন্ধ পাওয়া যায়।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও মাদ্রাসার কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে সেই বাড়ির বাসিন্দা আল-আমিন নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাড়ির মালিকের ভাই বলে পরিচয় দেন।
তিনি জানান, নিচতলার পাঁচটি কক্ষ নিয়ে এই মাদ্রাসা। তিন মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেন সাবিকুন্নাহার।
তবে সাবিকুন্নাহারের বাসার ঠিকানা কোনটি, সেটি জানাতে পারেননি আল আমিন। বলেন, ‘কয়েক মাস আগে মাদ্রাসার পাশের গলির একটি বাসায় থাকতেন তারা। কিন্তু এখন অন্য জায়গায় থাকেন। কোথায় সেটি জানি না।’
সেখান থেকে চলে এসে সন্ধ্যায় অবশেষে ফোনে কথা হয় ত্ব-হার স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে আপনাদের কাছে কিছু বলতে পারব না।‘
মিরপু-১১ নম্বরের এই মাদ্রাসাটি চালান ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহারফোনে কথা বলতে না চাইলে বাসায় আসব কি না- এমন প্রশ্নে সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘আমার কথা বলা নিষেধ আছে। আপনারা বোঝার চেষ্টা করেন।’
তবে কার নিষেধ, সেটি বলেননি তিনি।
ত্ব-হার সঙ্গে দেখা করতে রংপুরে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি রংপুর কেন যাব এখন? দেখি কী হয়। বলতে তো পারছি না, ওরা যদি গ্রেপ্তার দেখায় কোনো মামলায়।’
উদ্ধার হওয়ার পর ত্ব-হার সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারছি না।’
আপনি বলছিলেন, ত্ব-হা আপনার কাছে আসছে। কিন্তু তিনি তো গেলেন প্রথম স্ত্রীর কাছে।
এই মন্তব্যের জবাবে সাবিকুন্নাহার কিছু না বলে চুপ থাকেন।