বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেধাসম্পদ।’
বৃহস্পতিবার বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২১ উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত ‘জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধাসম্পদ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ওবায়দুর রহমান।
বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার বেগম, মো. সানোয়ার হোসেন এবং ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার মো. আবদুস সাত্তার।
অনুষ্ঠানে প্যাটেন্ট, ডিজাইন, ট্রেডমার্কস এবং ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের (জিআই) সনদ প্রদান করা হয়। এবার ‘প্যাটেন্ট’ ক্যাটাগরিতে সনদ পেয়েছেন বিজয় ডিজিটালের মোস্তফা জব্বার ও হিসাব লিমিটেড।
‘ডিজাইন’ ক্যাটাগরিতে বিডি ফুড লিমিটেড, জিহান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ‘ট্রেডমার্কস’ ক্যাটাগরিতে মোহনা টেলিভিশন লিমিটেড, এক্সসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল বিডি, প্রাণ আরএফএল গ্রুপ লিমিটেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড সনদ পেয়েছে।
এ ছাড়া ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে ঢাকাই মসলিন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম, রংপুরের শতরঞ্জির জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান, রাজশাহী সিল্ক বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, বিজয়পুরের সাদা মাটির জন্য নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান, দিনাজপুরের কাটারীভোগ ও বাংলাদেশ কালিজিরার চালের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউশনের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরকে সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৬০২১টি প্যাটেন্ট সনদ, ১৮,৪৯৮টি ডিজাইন সনদ এবং ৬২,৬০৯টি ট্রেডমার্কস্ নিবন্ধন সনদ প্রদান করেছে।
এ ছাড়া প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর বাংলাদেশের ইলিশ, জামদানি, ঢাকাই মসলিন, ক্ষীরসাপাতি আম, চিনিগুড়া ও কাটারীভোগ চাল, শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্কের ভৌগোলিক পণ্যের নিবন্ধন সনদ প্রদান করেছে।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেধাসম্পদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু’ শিল্পমন্ত্রী তার এই মন্তব্যের যথার্থতা তুলে ধরে আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ডিজাইন করেছেন, দিয়েছেন প্যাটেন্ট। তার চেয়ে বড় ডিজাইনার আর কেউ নাই। মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, ডিজাইন ও নির্দেশনার আলোকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তার কারণে বাংলাদেশ হলো, একটি জাতি হলো এবং একটি মানচিত্রের জন্ম নিল। আমরাও আজকের জায়গায় এসে পৌঁছেছি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে।’
বিশ্ব সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হলে দেশের সফল গবেষক, প্রযুক্তিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য মেধাসম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে- এই উপলব্ধি বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই করেছিলেন। দেশে আজকের যেই অর্জন, তার সেই উপলব্ধি থেকেই উৎসারিত হয়েছে। এখন মেধাসম্পদকে সংরক্ষণ ও কাজে লাগাতে হলে এর গুরুত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গবেষণা বাড়াতে হবে, প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে এবং সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পসচিব বলেন, ‘সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমেই কেবল একটি দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। এ জন্য মেধাসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ লক্ষ্যে মেধাসম্পদ সংরক্ষণে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর তথা শিল্প মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।