বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫০০ টাকায় ইন্টারনেট কত দূর?

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২১ ২০:২৪

ঢাকার বাইরে এখনও চালু হয়নি সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট। ঢাকায় একেক জায়গায় এখনও চলছে একেক রকম বিল নেয়া। বিটিআরসি বলছে, কেউ বেশি দামের অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেবে।

রাজধানীর ওয়াসপুরের বাসিন্দা অপূর্ব রায় কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। করোনার কারণে প্রায়ই অফিসের বিভিন্ন কাজ করতে হয় বাসা থেকে। এ কারণে আগের চেয়ে তার ইন্টারনেটনির্ভরতা বেড়েছে কয়েক গুণ।

কয়েক মাস আগে এলাকার একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে প্রতি মাসে ৫ এমবিপিএসের (মেগাবাইট-পার-সেকেন্ড) লাইন চালাতে তার গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।

সম্প্রতি সরকার সারা দেশে ইন্টারনেটের মূল্য ৫০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু এখনও আগের দামই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অপূর্ব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যে লাইনটি ব্যবহার করছি, এর গতি খুব খারাপ। দিনে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের জন্য কোনো ইন্টারনেট থাকে না। তার ওপর যদি কখনও বৃষ্টি বা ঝড় হয়, তাহলে সারা দিনই কোনো সংযোগ পাওয়া যায় না।’

ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে ৬ জুন সারা দেশে ইন্টারনেটের অভিন্ন দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার।

ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে সারা দেশে পাঁচ এমবিপিএস শেয়ার্ড ব্যান্ডউইথ প্যাকেজের সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএস প্যাকেজের মূল্য সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিটিআরসি বলছে, ঘোষণার পর থেকে কার্যকর হবে এ রেট। কিন্তু সার্ভিস প্রোভাইডাররা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা এখনও হাতে পাননি তারা। আর এ কারণে গ্রাহকদের আগের দামেই ইন্টারনেট বিল শোধ করতে হচ্ছে।

ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারে রাজধানীর একেক এলাকায় একেক দাম দেখা গেছে।

রাজধানী মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার আরামবাগ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাসকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইমরোজ শাহরিয়ার অবশ্য পাঁচ এমবিপিএসের জন্য আগে থেকেই ৫০০ টাকা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সমস্যা বলতে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে স্পিড কমে যায়, গভীর রাত বা ভোর ছাড়া ডাউনলোড করতে খানিকটা সময় লাগে। তবে কাস্টমার সার্ভিস তুলনামূলক ভালো।’

তবে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মেহরিন জাহানের ভাগ্য ততটা ভালো নয়। তিনি ৫ এমবিপিএসের ইন্টারনেট সেবার জন্য মাসে দিচ্ছেন ১ হাজার ৪৯৯ টাকা। তার ওপর সেবার মান নিয়ে তার নানান অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র দুইটা মোবাইল ব্যবহার করি। এর বাইরে বাচ্চা জুমে ক্লাস করে। এতেই নেট খুব স্লো কাজ করে। ফেসবুকের ভিডিও দেখার সময়ও বাফারিং করে মাঝে মাঝে।’

রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা রবিউল্লাহ রবির বাসায় ১০ এমবিপিএসের সংযোগ চলে। এর জন্য মাসে দিতে হয় ৭০০ টাকা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই সংযোগ থাকে না। সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেও নেট চলে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, রাত ১০টার পরে নেটের কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করতে অধিকাংশ সময়ে পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।’

গ্রাহকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী মাজেদা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইশরাফিল বলেন, ‘আমাদের কাছে সরকার থেকে এখনও কোনো লিখিত নির্দেশনা আসেনি। আগে থেকেই গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা যে বিল নিয়ে থাকি, তা অনেক কম।’

ইন্টারনেটগ্রহীতা ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এই ব্যবসা এখন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দখলে থাকায় গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধাকে তারা পাত্তা দেন না। গ্রাহকরা এক কথায় তাদের হাতে জিম্মি।

মিরপুর ১ নম্বরের বাসিন্দা তৌফিক হাসান বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি, সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানি নেট ও ডিশের ব্যবসা করে। কোম্পানির নাম রওশন আরা টেলিকম। মূলত এই কোম্পানিটি এলাকার কাউন্সিলরের। তাই অন্য কোনো কোম্পানি এখানে ব্যবসা করতে পারে না।

‘কোনো ধরনের ফরম্যাট নেই এদের কাছে যে কত এমবিপিএসে কত টাকা। যার থেকে যা পারে, তাই তারা রাখছে। আমি প্রথমে দেড় এমবিপিএস নিয়েছিলাম ৫০০ টাকায় আর নেটের তার কেনা বাবদ ১ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এটা ২০১৩ সালের কথা। দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সাল থেকে আমার কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। এমবিপিএস বলে বাড়িয়ে আড়াই এমপিপিএস করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি এত স্পিড কখনোই পাইনি।’

তার দাবি, এই এলাকায় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই সেবা নিতে হচ্ছে তাকে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর মহাসচিব এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে তিনটা প্রাইস ঠিক করেছে সরকার। ঢাকা শহরের গ্রাহকেরা আগে থেকেই এই সেবা পাচ্ছিল। ঢাকা শহরে ট্রান্সমিশন খরচ কম। গ্রাহকেরা ৫ এমবিপিএস আগে থেকেই ৫০০ বা ৬০০ টাকায় পাচ্ছেন।

‘১০ এমবিপিএস পাচ্ছেন ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। সমস্যাটা হচ্ছে ঢাকার বাইরে। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগের অবকাঠামো গড়ে দেয়ার কথা নেশনওয়াইড টেলিকম্যুনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) কোম্পানিগুলোর। এই ট্রান্সমিশন আমার এখতিয়ারে না।’

তিনি বলেন, ‘এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমরা ট্রান্সমিশন ভাড়া নিয়ে ইউজারের কাছে চলে যাই। আমরা এই যে ভাড়াটা নেই, এটা অনেক বেশি। এক এমবিপিএস ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ আমরা কিনি ৪০০ টাকায়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যেতে গেলে আবার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা চার্জ পড়ে। এর কারণে রেট বেশি পড়ে। ঢাকায় এই খরচটা হয় না। হলেও সামান্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইনফো সরকার-৩ নামে একটা প্রজেক্ট বানিয়েছে আইসিটি মিনিস্ট্রি। প্রতিটি ইউনিয়নে তারা ফাইবার অপটিক নিয়ে গেছে। এটা তো সরকারি টাকায় নেয়া হয়েছে। তাহলে এখন তো আমার ময়মনসিংহ যেতে বেশি টাকা গোনার কথা না, যেটা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিচ্ছি, ওইটা ১০০ টাকায় যাওয়ার কথা।

‘এখন ইনফো সরকার-৩ এর এই ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কটা রেডি আছে। ওই প্রজেক্ট থেকে এখনও প্রাইজ নির্ধারণ করা হয় নাই। ওইটা যখন আমরা সুলভ মূল্যে পেয়ে যাব, তখন থেকে গ্রামে-গঞ্জে ঢাকার মতো সুলভ মূল্যে একই দামে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।’

মন্ত্রীর বেঁধে দেয়া রেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার অসামঞ্জস্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী যে প্রাইস ঠিক করে দিয়েছেন, সেটা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। ঢাকা শহরে কম্পিটিশন অনেক বেশি। দেখা যায়, আমি ১০ এমবিপিএস ডিক্লেয়ার করলাম ১ হাজার টাকা। আরেকজন বলল, ১৫ এমবিপিএস দিবে ১ হাজার টাকায়। সরকার বলছে, আমি হাইয়েস্ট রেট নির্ধারণ করে দিলাম এটা, লোয়েস্ট রেট কমও হতে পারে। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা বিটিআরসিকে জানাই। তারা অ্যাকশন নেয়। আমরা তো কমপ্লেইনের অপেক্ষায় আছি।’

বিটিআরসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাকির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্যাকেজটা লঞ্চিং হয়ে গেছে। অর্থাৎ যেদিন ঘোষণা এসেছে, সেদিন থেকেই এটা কার্যকর। আগে থেকে যারা বিভিন্ন দামে ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন, তারা এখন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে ইন্টারনেটের বিল দেবেন। কোনো ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি বেশি টাকা নেয়, তাহলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর