মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া রাষ্ট্রের সম্মান গার্ড অব অনারে নারীদের না রাখার সুপারিশকে বেদনাদায়ক ও অবমাননাকর বলে সংসদকে জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এই মন্তব্য করেন দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
ইনু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবে আমি হতবাক, হতভম্ব। আমি এই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী চিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কেবল বলতে চাই, এই সব চিন্তা বাদ দিন।’
অন্যদিকে শিরীন আখতার বলেন ‘একটি জেলায় একজন জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি দিয়ে বলেছেন, কোনো হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেট যেন মুসলমান বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এই সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদর্শন না করেন। কী অবস্থা তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে! স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল যখন সরকারে, সেই সময়ে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখি, ফতোয়াবাজি দেখি। এই ধরনের ঘটনা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থেকে আসে, তা কিছুতেই বরদাশত করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, তাতে নারী ইউএনও যাতে উপস্থিত না থাকেন, বা তারা যাতে সেই কাজটি না করেন, সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সেই সুপারিশ করা হয়েছে। আমি বিস্মিত, হতবাক ও ব্যথিত যে, আমার সহকর্মীরা, এই সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা এমনটি উত্থাপন করতে পেরেছেন। সংবিধানে বলা আছে, নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। জানাজার সঙ্গে সম্মান প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছেন একজন নারী ও সফল নেতা হিসেবে। আজকে আপনি স্পিকারের পদে বসে আছেন। এই সংসদে আমার বোনেরা সব বসে আছেন।’
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন। আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
সংসদীয় কমিটির ১৩ জুনের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয় গার্ড অব অনার দেয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খোঁজার।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন করা এবং মহিলা ইউএনওর বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।’
কোন যুক্তিতে এই সুপারিশ জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, নারী ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন।
‘মহিলারা তো জানাজায় থাকতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে মহিলা গার্ড অব অনার দেন, এ রকম একটি ব্যাপার আরকি…।’
শাজাহান খান বলেন, ‘বৈঠকে একটি প্রস্তাব এসেছে। মহিলার বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেয়ার বিষয়টি এসেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে এটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছি।’
সংসদ ভবনে শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অংশ নেন।