ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ভেঙে না পড়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানালেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মুখ পরীমনি।
তার মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজন গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের নিজ বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বলেছেন, ঘটনার পর সবাই যখন তাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন, তখনও তিনি ভেঙে পড়েননি। এখন সবাই পাশে আছেন, তাই তিনি আরও সাহস পাচ্ছেন।
তবে সেই রাতের ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব মনে রয়ে গেছে জানিয়ে পরীমনি চিন্তিত কীভাবে তিনি এগুলো ভুলবেন।
গত রোববার পরীমনি হঠাৎ করেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে, হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। পরে রাতে গণমাধ্যমের সামনে এসে বিস্তারিত খুলে বলেন।
ঘটনা ঘটে গত বুধবার রাতে। আর পরীমনির অভিযোগ পুলিশ নিচ্ছিল না।
তবে সোমবার তার মামলা নেয়া হয় আর প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির নেতা নাসিরউদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনায় কৃতজ্ঞতা জানাতে পরীমনি সোমবার রাতে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে তার বাসায় আবার আমন্ত্রণ জানান।
গত বুধবারের ঘটনাপ্রবাহের আবার বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তার অমির ভূমিকাও বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
পাশে থাকার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরী বলেন, ‘আমি অনেক সাহস পাচ্ছি আরও শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। সবাই যে সাপোর্টটা দিয়েছে, এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এটা আপনারা ছাড়া সম্ভব হতো না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আসলে সত্যি সাহস পাচ্ছি। আমার আইনের ওপর আস্থা আছে। আসলে আমার তো মামলাই নেয়া হচ্ছিল না। এখন সবাই যেহেতু আমার পাশে আছে, আমার তো আসলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
আপনি ঘুরে দাঁড়াবেন?- এমন মন্তব্যের জবাবে পরী বলেন, ‘এত সাহস আপনারা আমাকে দিয়েছেন, এরপর কীভাবে আমি ভেঙে পড়ব? আমার কোনো সাপোর্ট ছিল না, তখনি ভেঙে যাইনি, আজ সবাই আপনারা আছে, আমি কেমনে ভাঙব বলেন?’
আপনি কাজে ফিরবেন কি না- এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি।’
কতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাবেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ততক্ষণ যতক্ষণ নারীর সুবিচার না হয়।’
তবে সেই রাতের ঘটনাপ্রবাহ মনের মধ্যে গেঁথে থাকে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত পরীমনি। বলেন, ‘আমি ওই রাতের কথা.. আসলে কীভাবে মেমরি থেকে ডিলিট করা যাবে? কিন্তু আমি মনে করতে চাই না আর।’
ভিকটিম ব্লেইমিংয়ের কথা বলে দমানোর চেষ্টা
বাংলাদেশের কোনো ঘটনায় নারী অংশ থাকলে যে ‘ভিকটিম ব্লেইমিং’ এর প্রবণতা আছে, সে বিষয়ে পরীমনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই বাক্যই তো আমাকে বোঝানো হচ্ছিল। আমার ক্যারিয়ার, তুমি একটা মেয়ে মানুষ, নায়িকা মানুষ, তোমার দিকেই আঙ্গুল উঠবে, তোমাকেই লোকে গালি দেবে।
‘গালিগালাজ তো করেই। এখন কী করব? আমার সাথে অন্যায় হওয়া… আমি কোনো বিচার চাব না এটার?’- বলেন পরীমনি।
তিনি জানান, এ কথা বলেই তাকে চার দিন আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কথাই সবাই বলে যাচ্ছিল। এটা তুমি এভাবে বললে ভাবো, ইজ্জত কোথায় যাবে? ইজ্জত তো আমার হানি হয়েছে ভাই। সেটার বিচার চাওয়া কি ইজ্জত যাওয়ার ব্যাপার? আমি তো জানি না।’
নাসিরউদ্দিনের অভিযোগের জবাব
পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে নাসিরউদ্দিন কয়েকটি গণমাধ্যমকে পাল্টা অভিযোগ করেছেন পরীমনিদের বিরুদ্ধে। এরও জবাব দেন পরীমনি।
নাসিরের দাবি, পরীমনি সেখানে গিয়ে জোর করে মদ খেতে চেয়েছিলেন। তারা বাঁধা দেয়ায় পাল্টা হামলা হয়েছে।
পরী বলেন, ‘এখন তো তার কিছু এটা বলতে হবে। এটা কি মেয়েদের পক্ষে সম্ভব?’
তিনি বলেন, ‘মদ তো আমাকে জোর করে গেলানো হয়েছিল। মদের বোতলটা এভাবে চেপে ধরে মুখের ভেতর দেয়া হয়েছিল আমার। আমার দাঁত… ঠোট ফুলে গিয়েছিল।’
পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির ইউ আহমেদকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলাপরী বলেন, ‘এখন কী বলব জানি না। কেন তার (নাসির) লোকজনকে দিয়ে সরি বলাচ্ছিল? সরি যে বলেছিল, সেটা তো আমার কাছে আছে। আমি তো সবাইকে দিয়েছি। চারদিন ধরে এসব কথা কেন হচ্ছিল? আমাকে কেন দমিয়ে রাখা হচ্ছিল বলেন? সে ভিকটিম হলে তো সে সবার আগে যাবে পুলিশের কাছে।’
এরপরও সাংবাদিকরা এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করে যেতে থাকলে পরী বলেন, ‘তোমরা কি মনে করো পার্টি করার মতো কোনো মুড ছিল আমাদের? বা মদ খাওয়া? এতটু যদি ভাবেন, আপনারা মনে হয় বুঝতে পারবেন।’
এফডিসির কাছ থেকে বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক গুলজার আহমেদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়েও পরীমনিকে প্রশ্ন করা হয়।
তবে গুলজার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি বিস্তারিত জানতেন না।
পরীমনি বলেন, ‘তাকে আমি মামা ডাকি। তাকে তো আমি ডিটেইল বলতে পারি না।’
‘সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’
অন্য এক প্রশ্নে পরী বলেন, তিনি যে মামলা করেছেন, তাতে যে শাস্তি আছে, তার সর্বোচ্চটাই কামনা করেন তিনি।
তবে এ জন্য সুষ্ঠু তদন্তের ওপরও জোর দেন তিনি।
বলেন, ‘যেহেতু আসামি ধরা পড়ছে, সমস্ত অভিযোগ করুক, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অভিযোগের ভিত্তিতেই তো আসলে শাস্তি দিয়ে দেবে না।…সবাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই সুষ্ঠু বিচার চায়। আমি তো এটাই চাই। এর বাইরে কিছু চাই না।’
অমির সঙ্গে কী সম্পর্ক
অমির কথাতেই সেই ক্লাবে গিয়েছিলেন পরী। সেই যুবকের সঙ্গে কী সম্পর্ক-এমন প্রশ্ন ছিল পরীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘সে কী পেশায়, কী করে না করে, এই ধরনের কথাবার্তা তার সঙ্গে আমার হয়নি। আমি জানি সে একজন ব্যবসায়ী এবং সিঙ্গাপুরে কী একটা ট্রেনিং সেন্টার আছে।’
সেই রাতে অমির ভূমিকায় যে সংশয় জেগেছিল, তার বর্ণনা দিয়ে পরী বলেন, ‘জিমিকে যখন মারধর করা হচ্ছিল, আমি তো বলেছি, অমি ভাইয়া অমি ভাইয়া তুমি কী করতেছ? তুমি কি দেখতেছ? অমি ভাইয়া তুমি কিছু বলতেছ না?’
তাহলে অমির সঙ্গে কেন গিয়েছিলেন- এমন প্রশ্ন ছিল পরীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে আসলে আমরা যাইনি। যাওয়ার পরেও আসলে জানি না ওটা একটা বোট ক্লাব। আমরা গেছিলাম আমাদের ছোটবোনটার সাথে। আম্মুর ওষুধ আনতে যাইতে হতো।
পরীমনির করা মামলায় প্রধান আসামি নাসিরউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে অমি, যাকে এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী বলছেন এই অভিনেত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
‘বনানীতে গাড়ি থামায়া প্রেসক্রিপশন থেকে ওষুধও কিনছি। কিনে আমরা উত্তরা যাব। অমি ভাইয়া বলছিল আমার দুই মিনিটের একটা কাজ ছিল, চলো না। জিমিকে বলছিল, তোমাকে আমি নামায়া দিব। কোনো সমস্যা নাই। তুমি জাস্ট দুইটা মিনিট আমাকে টাইম দিবা, বেশিক্ষণ লাগবে না।’
ক্লাবে অমিকে নিরাপত্তারক্ষীরা ঢুকতে দিচ্ছিল না। এরপর তিনি ফোন করেন নাসিরকে।
পরীমনি জানান, তখন বাথরুমে যাওয়ার তাড়া ছিল তার। আর এ কারণে পরে সেখানে ঢুকেন।
তিনি বলেন, ‘(তারা) বলেছে, সমস্যা নাই, ওয়াশরুম তো তোমরা ইউজ করতেই পার।’;
সেখানে ঢুকতে একটি কক্ষে সোফা ছিল। সেখানে বসেন পরীমনিরা। আর পাশে একটি টেবিলে নাসিররা মদ খাচ্ছিলেন।
পরীমনিকে দেখে নাসির এগিয়ে এসে কথা বলেন।
পরী বলেন, ‘তখনই বুঝছিলাম ওনি আসলে ওনি ড্রাঙ্ক। আমি কিন্তু তাকে সুন্দর বলে দাদা বলে সম্বোধন করেছি, তাকে সালাম দিয়েছি। তিনি আমাকে বসতে বললেন।’
এরপর তাদেরকে কফি খেতে বলা হয়। কিন্তু দেরি হচ্ছিল বলে পরীরা উঠে আসতে চাইছিলেন। তখন অমিই কফি খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চাপাচাপি করতে থাকেন বলে জানান পরী।