তিনি কোনো অচেনা মানুষ নন। আলো ঝলমলে মানুষটা কোথাও গেলে আলোড়ন পড়ে। অথচ বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম মিয়া রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ‘জানতেনই না’ যে পরীমনি তার থানায় গিয়েছিলেন।
তবে এই নায়িকা রোববার রাতে গণমাধ্যমের সামনে এসে তার ওপর চলা নির্যাতন আর বনানী থানার অসহযোগিতার বিষয়টি সামনে আনার পর পাল্টে গেল ওসির বক্তব্য।
এখন তিনি স্বীকার করছেন, পরীমনি তাদের থানায় গিয়েছিলেন।
রোববার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন পরীমনি। জানান, তিনি পুলিশসহ যাদের কাছে তার ঘটনা বলেছেন, তাদের কারও কাছ থেকে সহযোগিতা পাননি।
তবে তার কী অভিযোগ, পুলিশের কাছে গিয়ে কী অসহযোগিতা পেয়েছেন, তার কিছুই জানাননি সেই স্ট্যাটাসে।
তবে ঘণ্টা দুয়েক পর গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে গত বুধবার গভীর রাতের সেই বীভৎসতার কথা জানানোর পাশাপাশি বনানী থানায় কী হয়েছে সেটাও তুলে ধরেন।
পরীমনি জানান, তার অভিযোগ বক্তব্য লিখিত আকারে গ্রহণ করেনি বনানী থানা। তাকে বলা হয়েছে, সকাল ১০টায় ‘স্যার’ গেলে পরে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু তার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে এতক্ষণ থাকার সুযোগ ছিল না।
তখন পরীমনি পুলিশকে অনুরোধ করেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। আর পুলিশ তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের গেটে রেখে চলে আসে।
রোববার রাতে পরীমনি তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনার পাশাপাশি বনানী থানার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন
তখন ভীতসন্ত্রস্ত পরী তাদেরকে আবার ফোন করে হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও পুলিশ সে অনুরোধ রাখেনি। পরে ভয়ে চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে আসেন।
পরীমনি এই অভিযোগ তোলার পর থেকে বনানী থানার ওসির সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে নিউজবাংলা। প্রথমবার তিনি বলেন, পরীমনি থানায় এসেছিলেন কি না সেটি তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে জানাবেন।
পরে রাত ১২টার দিকে আবার ফোন করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন, পরীমনি তার থানায় যাননি।
এর মধ্যে সোমবার তোলপাড় পড়ে যায়। মামলা করেন পরীমনি, গ্রেপ্তার হন প্রধান সন্দেহভাজন নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজন।
পুলিশ মোতায়েন হয় পরীমনির বাসায়। বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে বলা হয়, পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ নারীর অধিকারের বিষয়টি নিয়ে খুবই সংবেদনশীল।
এর মধ্যে পাল্টে গেল বনানী থানার ওসির ভাষ্যও। সোমবার দুপুরে তিনি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন পরীমনি অভিযোগ দিতে তার থানায় গিয়েছিলেন।
তার এবারকার বর্ণনা এ রকম:
‘ঘটনার দিন ভোর ৪টার দিকে আমাদের থানায় এসেছিলেন পরীমনি।’
অভিযোগ গ্রহণ না করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘তখন তিনি (পরীমনি) বেসামাল ছিলেন। মানে স্বাভাবিক ছিলেন না। তখন তো কোনো তথ্য নেয়া যায় না। তাকে স্বাভাবিক করার জন্য, সুস্থ করার জন্য আমাদের একটা পুলিশ স্কোয়াড দিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে আসলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তবে সেদিনের পর পুলিশ পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর ওসি যুক্তি দাঁড় করান এভাবে:
‘উনি সুস্থ হয়ে আসেন নাই কিংবা তথ্য প্রদান করেন নাই। কোনো অভিযোগ করেন নাই। উনি যেহেতু অসুস্থ ছিলেন, আমরা হাসপাতালে নেয়ার জন্য সহযোগিতা করেছি।’
পরীমনি বলেছেন, তিনি চিকিৎসা নেয়ার সময় পুলিশকে থাকার অনুরোধ করলেও তা শোনেনি বাহিনীটি।
ওসি বলেন, ‘হাসপাতাল পর্যন্ত আমরা পৌঁছে দিছি।’
একজন মানুষ থানায় গেলে থানা থেকে তাকে ন্যায়বিচারের জন্য সাহায্য করা হবে না?-এমন প্রশ্নে নূরে আজম বলেন, ‘আমাদের তো তথ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। কোন জায়গায় কী ঘটনা ঘটছে, কী ঘটেছে, বিভিন্ন ইস্যু থাকে। আমরা তো মানবিক ও আইনগত যে বিষয়টা দেখছি। এখন অভিযোগ পাওয়া গেছে, সাভার ঘটনাস্থলে থানায় মামলা হয়েছে।’
গতকাল পর্যন্ত আপনারা বলেছিলেন পরীমনি থানায় আসে নাই, আজ বলছেন থানায় এসেছিলেন। এই দুই কথার কারণ কী?
এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে ওসি বলেন, ‘কারণ, উনি লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেন নাই।’
আপনি তো দাবি করেছেন পরীমনি আপনার থানায় যানইনি- ওসিকে আবার প্রশ্ন করলে তিনি এবারও সরাসরি বক্তব্য না দিয়ে আগের কথাই বলেন।