যানবাহন হিসেবে বৈধতা নেই। একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো হয়েছে সেটি। তবে বন্ধ করতে না পেরে এবার নসিমন, করিমন এবং ইজিবাইককে নিবন্ধনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে, যেটিকে বিপজ্জনক বলছেন একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ।
স্থায়ী কমিটি সড়ক ও মহাসড়কের গতিরোধক বা স্পিড ব্রেকার অপসারণের অনুরোধও করেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক এই সুপারিশকে সমর্থন করছেন না। তার ধারণা, এটি সড়কে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে।
রিকশা ভ্যান বা এই জাতীয় কাঠামোতে সেলো ইঞ্জিন বসিয়ে মালামাল বা যাত্রী টানার এই গাড়িগুলো জেলা পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে এসব গাড়িকে সড়ক নিরাপত্তার জন্য এতদিন সরকার ঝুঁকি হিসেবেই দেখে আসছে।
নিবন্ধন না থাকায় এই ধরনের যানবাহনের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই সরকারের।
এই বাহনগুলো একেক এলাকায় একেক নামে ডাকা হয়। কোথাও কোথাও ভটভটি, কোথাও আলম সাধু, পাখি ভ্যান ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
এর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে যাত্রী পরিবহনে ব্যাপকভাবে ইজিবাইকের ব্যবহার বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত এই হালকা গাড়িগুলো রিকশার বিকল্প হয়ে উঠেছে। এক সঙ্গে বেশি যাত্রী বহন করা যায়, পাশাপাশি গতিও বেশি। আবার প্যাডাল চালাতে হয় না বলে চালকেরও শারীরিক কষ্ট কম। পাশাপাশি রিকশাতেও মোটর লাগিয়ে ব্যাটারি দিয়ে চালানো হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে মফস্বল ও মহানগরের শহরতলীতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে এই ধরনের অটোরিকশা
এসব যানবাহন ও যন্ত্রাংশের আমদানি করা হয়, দেশে সংযোজন কারখানা আছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও নানা সময় উপহার দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তবে নিবন্ধন না থাকার কারণে পুলিশ প্রায়ই এসব যানবাহন আটক করে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা চাঁদাবাজির শিকার হয়। টাকা দিয়েই তাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়।
তবে মহাসড়কে চলাচল করার কারণে প্রায়ই প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই দেখা যায়, বড় গাড়ির চাপায় পিষ্ট হয়ে ইজিবাইকের সব আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
সংসদীয় কমিটি মনে করছে, এসব যানবাহনকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারলে রাজস্ব আদায় যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভেতরে এলে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে শর্তগুলো পূরণ করা যাবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের সভাপতিত্বে ১০ম বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এনামুল হক, হাসিবুর রহমান স্বপন, আবু জাহির, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার, শেখ সালাহউদ্দিন, সৈয়দ আবু হোসেন এবং রাবেয়া আলীম।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক
কমিটির আরেক সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
পরিবহন বিশেষজ্ঞের দ্বিমত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যদি টেকসই উন্নয়নের কথা বলি তাহলে আমি বলব, এ ধরনের ডিসিশনগুলোর কাউন্টার করা ঠিক হবে। কারণ, তা বৈধতা না পেয়েই মহাসড়কে দিব্যি চলছে। দুর্ঘটনার বড় কারণ হচ্ছে।’
কী কারণে এটা করা উচিত নয়, সেটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘চালকদের কোনো রোড সেন্স নেই। মহাসড়কে যে টেম্পারমেন্ট দরকার সেটাও তাদের নেই। আমরা হয়ত নিবন্ধন ফি টা পাব। কিন্তু রেগুলেটরি অথরিটির কাজ হচ্ছে এগুলো যখন ফ্লারিশ করছে, তখনই কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা। ছোট ছোট গাড়ি নিয়ে কোনো দেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যেতে পারে না।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত সড়ক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে
কিন্তু এসব যানবাহন তো বন্ধ করা যায়নি। আবার গ্রাম এলাকায় মানুষের চলাচল আর মালামাল পরিবহনে এর ভূমিকাও আছে- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছোট গাড়িকে প্রশ্রয় দিলে, উৎসাহিত করলে প্রণোদনা দিলে, পরে এগুলো আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তারা বৈধতা পেলে মহাসড়কে আরও চলবে। সুতরাং নিরাপদ সড়কের নির্মাণের প্রিন্সিপাল ভেঙে জীবন-জীবিকার কথা বলে এসব করতে চাইলে করা যাবে।’
কী বলছেন কমিটির সদস্য
যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, তাদের সুপারিশ অত জোরাল না।
তিনি বলেন, ‘কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন তার এলাকায় নসিমন-করিমনের চালকরা দাবি করেছেন ন্যূনতম এক লাইসেন্স দিতে। তারা যাতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে অন্য যানবাহনের মতো বৈধভাবে চলতে পারে।
‘আমরা সুপারিশ করেছি মাত্র। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কমিটির কোন সদস্য এমন দাবি তুলেছেন জানতে চাইলে, ওই মুহূর্তে তার নাম মনে করতে পারেন নি। তবে জানিয়েছেন নওগাঁর একজন এমপি।
সদস্যদের নাম যাচাই করে দেখা গেছে নওগাঁ-৩ এর সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার আছেন কমিটিতে। তার মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও পাওয়া যায়নি তাকে।
অন্যান্য সুপারিশ
সংসদীয় কমিটি আরও বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বৈঠকে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের-বিআরটিএ সেবা আধুনিকায়নে সকল দুর্নীতি রোধ, বিআরটিএর শূন্যপদের সংখ্যা, শূন্যপদ পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণের অগ্রগতি আগামী সভায় উপস্থাপন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সিলেট জোনের আওতায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং বিআরটিএর সেবার আধুনিকায়নের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় বৈঠকে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো প্রকল্পে কয়টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কত সংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন, তার একটি তালিকা আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করতেও মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি।