স্ট্রিমকার একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফরম, যা দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়। এদের টার্গেট মূলত যুবসমাজ ও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা। এই প্লাটফরমে বিভিন্ন অপরাধ পরিচালিত হওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ সেন্টার বহু দিন থেকেই অনুসন্ধান চালাচ্ছিল।
এই অনুসন্ধানে ১৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পায় সাইবার পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ মে এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সাভার থানার মামলা করা হয়, যা সাইবার পুলিশ সেন্টার অধিগ্রহণ করে।
এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য ও আগের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) বুধবার রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
এরা হলেন- নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান।
তিনি বলেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করে এ দেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি।
‘হোস্ট আইডি ব্যবহার করে বিশেষ কিছু চক্র এক ধরনের অপরাধজনক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে তরুণীদের হোস্টিং করিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করা হতো। এদের টার্গেট মূলত যুবসমাজ ও প্রবাসীরা।’
লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য বিন্স নামে ভার্চুয়াল টাকা কিনতে হয় তাদের। সেই টাকা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হন ব্যবহারকারীরা।
অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, অভিযুক্তরা স্ট্রিমকার অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে এ কার্যক্রম পরিচালনায় বিন্স (Bins) ও জেমস (Jems) নামের দুটি ডিজিটাল টাকা ব্যবহার করে এই লাইভ ভিডিও ও চ্যাট আপে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার লোভ দেখিয়ে লোকজনকে টেনে নিয়ে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ফেলতেন। তারা এক লাখ বিন্স এক হাজার ২০ টাকায় এবং এক লাখ জেমস ৬০০ টাকায় বিক্রি করতেন।
টাকা সংগ্রহের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এই টাকা সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন এমএফএস এবং ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এই এজেন্সিগুলো তা কিনে আনে বিদেশি অ্যাপের অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এরকম স্ট্রিমকারের অনেক এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। তারাই ডিজিটাল বা ভাচুয়াল টাকা কেনাবেচা করে। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার, স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল টাকা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।
‘স্ট্রিমকার পরিচালনায় জড়িত প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্ট রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত নিধু রাম দাস এর ব্যাংক একাউন্টের ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ১০ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যজন ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্টের ও বিকাশ একাউন্টে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।’
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এবং তাদের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন এর তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তার করার সময় তাদের কাছ থেকে লেনদেনে ব্যবহৃত ব্যাংক চেক বই, ডেভিড কার্ড, বিকাশ একাউন্ট নম্বর ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মোবাইলে এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।