অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়েছে। তারা হলেন, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চার নম্বর উমারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল মতিন মন্ডল ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চার নম্বর উমারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মতিন মন্ডলের অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌহালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা ইয়াসমিন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত পত্রে ইউপি চেয়ারম্যানের বরখাস্তের আদেশের পত্র হাতে পেয়েছি। চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের ভিজিডি কার্ডধারীদের চাল বিতরণে অনিয়ম, ভিজিডি কার্ডধারীদের প্রতিমাসে দুইশত টাকা জমা না দিয়ে উল্টো আরও ৫০ টাকা করে সঞ্চয় আদায়সহ জেলেদের মধ্যে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণে অনিয়ম করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচির আওতায় শ্রমিকদের মাথাপিছু এক হাজার টাকা উত্তোলন ছাড়াও চেকে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া বিধি-বিধান তোয়াক্কা না করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন।
এসব অভিযোগ প্রাথমিক প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রশাসকের সুপারিশে আব্দুল মতিন মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হবে না এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে পত্রের মাধ্যমে কারণ দর্শাতে বলা হয়। তবে আব্দুল মতিন মন্ডলের কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (খ) ও (ঘ) ধারায় অপরাধ করায় একই আইনের ৩৪ এর (৫) ধারা মোতাবেক আব্দুল মতিন মন্ডলকে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়।
একই অপরাধে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবুকে অপসারণ করা হয়েছে। গত ৬ জুন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।
জানা গেছে, ভিজিএফ, ভিজিডি, এডিপি, পরিষদের মাসিক সভা এবং অন্যান্য সভা নিয়মিত না করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি অভিযোগ এনে লুৎফর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন পরিষদের ১১ সদস্য। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রশাসন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে ভোট করে। এতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১১ ভোট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সদস্যরা ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিধি অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।