দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ রক্ষায় প্রজননকাল নির্ধারণ করে অল্প সময়ের জন্য মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ।
রাজধানীর মৎস্য ভবনে বুধবার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের প্রজননকাল নির্ধারণ ও সংরক্ষণ’ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এ কথা জানান।
সচিব বলেন, ‘দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ রক্ষায় প্রজননকাল নির্ধারণ করে ওই সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হবে। তবে নিষিদ্ধকাল হবে স্বল্প সময়ের জন্য। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে হবে।’
এ জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনে উপজেলাভিত্তিক পাইলটিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ সংরক্ষণে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
দেশের মৎস্য খাতের প্রবৃদ্ধি অভাবনীয় মন্তব্য করে সচিব বলেন, ‘জলাশয় কমে যাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্তমানে দেশে মাছের উৎপাদন প্রায় ৪৬ লাখ মেট্রিক টন।’
কর্মশালায় মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ বলেন, ‘দেশীয় মাছের প্রজননকাল নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে নতুন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
জনসচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাছের অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও বিএফআরআই উদ্ভাবিত মাছের চাষ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
রাজধানীর মৎস্য ভবনে বুধবার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের প্রজননকাল নির্ধারণ ও সংরক্ষণ’ বিষয়ক কর্মশালা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য স্থায়ীভাবে মা মাছ সংরক্ষণে বছরব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে প্রজননকাল নির্ধারণ করেও সাফল্য আসবে না।’
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘গবেষণার ফল মাঠে সম্প্রসারণ করা না গেলে গবেষণার কোনো মূল্য নেই। এ জন্য বিএফআরআইয়ের সব গবেষণায় মৎস্য অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করা হবে।’
জনগণকে যুক্ত করতে না পারলে কোনো গবেষণায় সাফল্য পাওয়া যাবে না বলেও মত দেন তিনি।
কর্মশালা শেষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষ প্রযুক্তি নির্দেশিকা’ নামের একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহা আলী নিউজবাংলাকে জানান, সাধারণত দেশীয় মাছের প্রজননকাল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে উৎপাদন বাড়বে।
ওই কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, যুগ্ম সচিব ড. মশিউর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক শেফাউল করিম এবং মৎস্য অধিদপ্তর ও বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।