করোনাভাইরাস মহামারি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের অব্যাহত সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে ঢাকার পাশে থাকার কথা জানিয়েছে টোকিও।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মধ্যে বুধবার দুপুরে সাক্ষাতে এ নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোহিঙ্গা সংকট কীভাবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভারসাম্য নষ্ট করছে, তা জাপানের রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ ভূমি রাখাইনে প্রত্যাবর্তন না করা গেলে এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে।
তাই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে রাখাইনের অভ্যন্তরে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে জাপানের সহযোগিতা ও কার্যকর ভূমিকা চায় বাংলাদেশ।
প্রতিমন্ত্রী জাপানি রাষ্ট্রদূতকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে মিয়ানমারে তাদের প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন।
জবাবে রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটির অব্যাহত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, করোনাভাইরাস ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়।
শাহরিয়ার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সবার জন্য এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জিং সময় সৃষ্টি করেছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত নানা উদ্যোগ জাপানি রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানের কাছ থেকে সহায়তা চান।
রাষ্ট্রদূত ইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, বিশেষ করে করোনা চলাকালীন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূতকে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। আশা প্রকাশ করে বলেন, এ উদ্যোগ জাপানের মানসম্মত অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করবে; পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে। এটি আঞ্চলিক যোগাযোগকে জোরদার করবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়েও সাক্ষাতে আলোচনা হয়। জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করে জাপান রাষ্ট্রদূত ক্লিন এনার্জিতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা জানান।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ-জাপান রচিত কূটনৈতিক সম্পর্ক আগামী বছর ৫০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে। দুই দেশ আগামী বছরে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে তারা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরকে স্মরণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও জাপান রাষ্ট্রদূত। ওই সফরেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল।
প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদ সুগার অংশগ্রহণের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন।