দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশের অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলছেনা প্রত্যক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম। সীমিত পরিসরে চলে দাপ্তরিক কাজ।
তবে এই মহামারিতেও থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া। স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে কর্মকর্তা ও শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকমাসে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৭জন শিক্ষক ও ১০জন অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগে ২৬ জন প্রভাষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবার ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ২জন নিরাপত্তা কর্মকর্তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়।
সর্বশেষ ২৮শে মে একটি জাতীয় দৈনিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১১জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর কার্যক্রম ঈদের ছুটিতে ২৯শে মে পর্যন্ত বন্ধ ছিল।
নিয়োগ বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, বাংলা বিভাগে অস্থায়ীভাবে একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অস্থায়ীভাবে ছয়জন প্রভাষক এবং একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে অস্থায়ী তিনজন প্রভাষক নিয়োগ করা হবে।
এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তিনজন, রসায়ন বিভাগে পাঁচজন, গণিত বিভাগে চারজন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে দুইজন স্থায়ী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগে একজন স্থায়ী ও দুইজন অস্থায়ী, মার্কেটিং বিভাগে দুইজন, দর্শন বিভাগে ছয়জন এবং সেন্টার অফ একসিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (সিইটিএল) বিভাগে একজন অস্থায়ী প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হবে।
অন্যদিকে ২ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসে একজন, সিইটিএল অফিসে একজন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাবে একজন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে একজন, আইআইটি ল্যাবে একজন, গ্রন্থাগার অফিসে একজন, অভ্যন্তরীণ অডিট অফিসে একজন ও জনসংযোগ অফিসে একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রশাসনের এই ১০ পদের জন্য এক হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। প্রতিটি আবেদনের ফি ৬০০ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, পদ না থাকা সত্ত্বেও নতুন পদ তৈরী করে পছন্দের প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দিতে এসব নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন বলেন, ‘মহামারিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগের কোন যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নেই। এ সময় নিয়োগ আহ্বান করা হলে অনেক যোগ্য প্রার্থী সুযোগ পাবে না। বর্তমান প্রশাসন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যই মূলত এ ধরনের কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কীভাবে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয় সেটাই বুঝছিনা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন আরও বলেন, ‘মহামারির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিংয়ের (আইআরএস) দুইবার স্থগিতকৃত নিয়োগ বোর্ড পুনরায় বসিয়ে তাদের পছন্দমতো একজনকে প্রভাষক বানিয়েছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছিলাম। বর্তমান অবস্থায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না আসলে নিয়োগ কার্যক্রম চালানো ঠিক হবে না।’
এসব নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘মহামারিতে সবকিছু থেমে নেই। অনেককিছুই চলছে ভিন্ন উপায়ে। শ্রেণি কার্যক্রম অনলাইনে চালাতে হলেও শিক্ষকের প্রয়োজন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস নিয়মিতভাবে খোলা ছিল। এখনও চলছে। তাই প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রয়োজন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সরাসরি কোনো নিয়োগ বোর্ড বসেনি। অনলাইনে কিছু বোর্ড বসেছিল। এর মধ্যে একটি শিক্ষক নিয়োগের। বাকিগুলো আপগ্রেডেশনের ও অন্য অস্থায়ী নিয়োগকে স্থায়ীকরণের।’