বাংলাদেশি তরুণীকে সম্প্রতি ভারতে নৃশংস নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিসহ তার সহযোগী আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান আদালতে দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম মোহাম্মদ জসীম আসামি বস রাফির এবং মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার আসামি আব্দুর রহমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক আসামিদের আদালতে হাজির করেন।
এরপর বস রাফি ও আব্দুর রহমান স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড এবং ইসমাইল সরদার ও মোছা. সাহিদা বেগমকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই প্রেক্ষাপটে বিচারক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
একই মামলায় ইসমাইল সরদার ও সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদাকে রিমান্ড শেষে কারাাগারে পাঠানো হয়েছে।
মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশীদের আদালত ইসমাইল সরদার ও মোছা. সাহিদা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ২ জুন আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
ভারতে নারী পাচার এবং সম্প্রতি বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে নৃশংস নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদাসহ পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সম্প্রতি চার-পাঁচজনের একটি দল ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি সাইবার মনিটরিং টিমের নজরে এলে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে নির্যাতনকারীদের একজন হিসেবে রাজধানী মগবাজারের রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’কে শনাক্ত করে পুলিশ। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, চার মাস আগে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে।
পরে পুলিশ কৌশলে টিকটক হৃদয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে জানতে পারে, তিনি মাস তিনেক আগে ভারতে গেছেন। কেরালায় ১৫-২০ দিন আগে ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ঢাকায় হাতিরঝিল এলাকায় বাসা। এ ঘটনায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন তরুণীর বাবা।
এদিকে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন টিকটক হৃদয়। তিনি বস রাফির সহযোগী। চক্রটি গত কয়েক বছরে ভারতে অন্তত ৫০০ নারীকে পাচার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সম্প্রতি চক্রটির হাতে বন্দিদশা থেকে পালিয়ে দেশে আসা আরেক তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, পাচারের পর বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন শহরে তাদের আটকে রেখে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়।