জেলখানায় গেলে সবাই অসুস্থ হয়ে যায় কি না এমন প্রশ্ন রেখেছে হাইকোর্ট। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে এ প্রশ্ন রাখে আদালত।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল বেঞ্চে মঙ্গলবার এ শুনানি হয়।
আদালত আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে কেন বিতর্কিত করেন? রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অফিসকে কেন প্রশ্নের সম্মুখীন করেন। আপনার কাছে এ ধরনের অপরাধ ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাকে নমনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নাই।
নথি জালিয়াতির মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মচারী ফাতেমা খাতুন। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী।
আসামির জামিন প্রার্থনা করে শুনানিতে আইনজীবী বলেন, তার মক্কেল এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন। উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
আইনজীবী বলেন, ‘আমার মক্কেল এজাহারের তিন নম্বর আসামি। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রয়েছে। গত বছরের ১০ মে থেকে কারাগারে আছেন তিনি।’
এ সময় আদালত বলে, ‘জেলখানায় গেলেই কি সবাই অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদের কিছুই করার নাই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিতর্কিত কেন করেন? জামিন দেয়া হবে না। শুধু রুল নিতে পারেন।’
আইনজীবী বলেন, উনি (আসামি) অসুস্থ।
আদালত বলে, কিছু করার নাই।
পরে আইনজীবী রুল নিতে চাইলে হাইকোর্ট আসামির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে।
সেই সঙ্গে মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার আরেক আসামি নাজিম উদ্দিনের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের করে জালিয়াতির মাধ্যমে তার (প্রধানমন্ত্রীর) সিদ্ধান্ত বদলে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে মামলাটিতে।
ওই মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলাম মমিন, কর্মচারী ফাতেমা খাতুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগপত্রে বাকি আসামিরা হলেন- নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতিপর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি−গোপনীয় এ তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন।
এরপরেই তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪নং গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এ কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এরপরেই সেই নথিতে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টিক চিহ্নটি টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন।
পরে আসামিরা ৩ মার্চ নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠান। এসব ঘটনা নিয়ে ভাটারা এলাকার সানফ্লাওয়ার রেস্টুরেন্টে আসামি নাজিমের সঙ্গে তরিকুল ও ফরহাদ সলাপরামর্শ করেন। একপর্যায়ে তাদের জালিয়াতিটি ধরা পড়ে যায়।
জালিয়াতির এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত বছরের ৫ মে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।