রাজধানীর মিরপুরে গ্যাসের বিল দেয়ার নাম করে প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া ওমর ফারুকের বিচার ও টাকা ফেরত দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। একই সঙ্গে প্রতারণার ঘটনায় তিতাস, ডেসকো ও ওয়াসার কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মিরপুর-২-এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারেক মোল্লার মোড়ে এই মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ।টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে মামলা হওয়ার পর থেকে পলাতক ছিলেন ফারুক। রোববার রাতে তাকে সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তবে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া ১০ কোটির বেশি টাকা ফারুক কোথায় রেখেছেন তা এখনও জানতে পারেনি সংস্থাটি।
২০১৮ সাল থেকে ওমর ফারুক মিরপুর-২-এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রায় গ্রাহকের নিয়মিত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতেন।
বিল সংগ্রহের সময় গ্রাহককে ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রসিদ সরবরাহ করায় তিনি ধীরে ধীরে গ্রাহকদের মাঝে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠায় তার গ্রাহকসংখ্যা হয় দেড় হাজার। কিন্তু তাদের বিল জমা না দিয়ে তিনি সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, তিতাস ও ওয়াসার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। নাহলে যেদিন ফারুক অফিসে তালা দিয়ে পালিয়ে যান, তার পরদিনই কেন গ্যাস, পানির লাইন কাটতে এসেছিল তিতাস ও ওয়াসা।
মানববন্ধনে তারা জানান, ফারুক বিল জমা না দেয়ায় তাদের ১২ মাস থেকে ২৬ মাস পর্যন্ত বিল বকেয়া পড়েছে। শুধু গ্যাসের বিল নয়, অনেকের পানি ও বিদ্যুতের বিলও আত্মসাৎ করেছেন ফারুক। ইতিমধ্যে অনেক বাসিন্দার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়াসা, ডেসকো ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
ফারুকের প্রতারণার শিকার এক গ্রাহক ইতি বলেন, ‘দুই বছর ধরে ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের মাধ্যমে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি। এ বছর যখন হঠাৎ করে প্রথমে ডেসকোর লোকজন বিদ্যুতের লাইন কাটতে আসেন, আমরা বলি বিল তো দিছি, তারা বিশ্বাস করেন না। কাগজ দেখাই তাও বিশ্বাস করেন না। লাইন কেটে চলে যান তারা। এরপর তিতাসের লোকজনও আসেন গ্যাসের লাইন কাটতে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পরদিনই ডেসকো অফিসে যাই। দেখি, আমাদের মতো আরও অনেক ভুক্তভোগী। একইভাবে গ্যাস অফিসেও। এরপর বারেক মোল্লার মোড়ে ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের অফিসে এসে দেখি তালাবদ্ধ। যোগাযোগের নম্বরও বন্ধ।’
মানববন্ধনে ইতি বলেন, ‘আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বকেয়া। অথচ তিতাস দুই বছর খোঁজ নিতে আসেনি। ডেসকো তিন মাস বকেয়ার খোঁজ নিতে আসেনি। যেদিন ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের ওমর ফারুক পালিয়ে যান, তার পরদিনই সবাই লাইন কাটতে আসছে। পুলিশ তাকে খুঁজতে আসছে। এটা সন্দেহের। ফারুকের সঙ্গে তিতাস, ডেসকো ও ওয়াসার লোকজন জড়িত থাকতে পারে।’
মনির আহম্মেদ নামে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘লাখ টাকার বিল আমি পরিশোধ করেছি। এই বিল কেন আমি আবার দেব? আমরা প্রতারণার শিকার। প্রতারক গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আমাদের অনুরোধ, হয় এ বিল মওকুফ করেন, নয়তো টাকা উদ্ধার করে দেন।’
সামসুদ্দিন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘তিন মাস ওয়াসার বিল বকেয়া থাকলে নোটিশ আসে। সাত দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। অথচ ছয় মাস ওয়াসার খবর ছিল না। সব বিল মিলে ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করছি। যেটা কিনা এখন পুরোটাই বকেয়া শোধ করতে হবে।’