ছোট ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম টিকটক গ্রুপের সদস্যদের বিভিন্ন হ্যাংআউট ও পুলপার্টি প্রোগ্রাম আয়োজনে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হয়েছে। সেই অর্থ কারা, কেন ব্যয় করেছেন, তাদের সবাইকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের মধ্যেই এ বিষয়ে সন্তোষজনক তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি জানান, অনলাইনের মতো বিশাল সমুদ্রে অসংখ্য টিকটক গ্রুপ রয়েছে, যাদের মধ্য থেকে পাঁচ শতাধিক সন্দেহভাজন টিকটক গ্রুপের ওপর নজরদারি চলছে। এসব গ্রুপের অ্যাডমিন শনাক্তের কাজ চলছে।
ভারতে নৃশংস নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণীর প্রসঙ্গ টেনে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি একটা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
‘তাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এরা মূলত টিকটক গ্রুপের মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদান করে সংগঠিত হয়ে থাকে। পরে নিজেদের মধ্যে থেকে কিছু মেয়েকে বাছাই করে উন্নত কাজের স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। পরবর্তী সময়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করে খারাপ কাজে বাধ্য করেছে তারা।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে বিভিন্ন টিকটক গ্রুপে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা পাচারে যুক্ত তাদের শনাক্তের কাজ চলছে। তাদের পুলপার্টি ও হ্যাংআউটের জন্য বিশাল অর্থ খরচ হয়েছে। সেই অর্থ কীভাবে এলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, সাধারণত ১৭-২২ বছর বয়সী নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা টিকটক গ্রুপের সদস্য। এদের কারও বাবা চা-বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতা; আবার কারও অভিভাবক গাড়ির চালক।
টিকটক গ্রুপের মাধ্যমে এ পর্যন্ত কতজন নারী পাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
দেশে টিকটক গ্রুপের পুলপার্টি কিংবা হ্যাংআউট কালচার শুরু কবে, এমন প্রশ্নে ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টিকটক পার্টির খবর পাই। তারপর পুলপার্টি ও হ্যাংআউটের খবর পাই।
‘আমরা তো টিকটককে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই জানতাম। তারা নিজেরা আনন্দ উল্লাস ও ছোটখাটো অর্থ উপার্জনের জন্য টিকটক ব্যবহার করত। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এই গ্রুপের আসল উদ্দেশ্য জানতে পারি।’
ইতোমধ্যে এ ধরনের পাঁচ শতাধিক গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব গ্রুপের অ্যাডমিন ও সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওর তরুণী ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানকার পুলিশ এক ভারতীয় ও আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে। সেখানকার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আমাদের মামলার আসামি হিসেবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’