রাজধানীর মিরপুর-২-এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গ্যাসের বিল দেয়ার নাম করে দেড় সহস্রাধিক গ্রাহকের টাকা মেরে পালিয়েছিলেন ওমর ফারুক। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে মামলা হওয়ার পর থেকে পলাতক ছিলেন ফারুক।
তাকে রোববার রাতে সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তবে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া ১০ কোটির বেশি টাকা ফারুক কোথায় রেখেছেন তা এখনও জানতে পারেনি র্যাব।
সোমবার বিকেলে কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাইনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টাকা কোথায় রেখেছে, তা সে স্বীকার করেনি।’
ফারুকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ে মামলা হলে প্রতারণার টাকা কোথায় সরানো হয়েছে, তা জানা যাবে বলে জানান মোজাম্মেল হক।
প্রতারণার টাকা গ্রাহকরা ফেরত পাবে কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি র্যাব-৪ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘প্রতারণার টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন। যারা ভুক্তভোগী, তারা অনেকে মামলার বাদি হননি। তারা মামলায় প্রতিপক্ষ হলে একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়।’
ভুক্তভোগীদের মামলা করতে বলেন র্যাবের অধিনায়ক। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ে মামলা হওয়ার পর আসামির সম্পদ বাজেয়াপ্ত হলে সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়।’
তিতাসের কেউ জড়িত থাকতে পারে
দেড় থেকে দুই বছর ধরে তিতাসের বিল জমা না হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ওমর ফারুকের প্রতারণা সঙ্গে তিতাসের কেউ জড়িত কিনা এ বিষয়ে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তার সহযোগী কয়েক জনের নাম পেয়েছি। আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।’
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফারুক পালানোর পর তিতাস মাইকিং করেছে। এর আগে দেড় থেকে দুই বছর ধরে গ্রাহকদের বিল যে পরিশোধ হচ্ছে না, এ নিয়ে তিতাস কোনো শব্দ করেনি। পরে জানিয়েছে, গ্রাহকদের বকেয়া রয়েছে।
এমএলএম ও মোবাইল ব্যাংকিং-এও ছিলেন ফারুক
২০১৮ সাল থেকে ওমর ফারুক মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রায় গ্রাহকের নিয়মিত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতেন।
বিল সংগ্রহের সময় গ্রাহককে ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রশিদ সরবরাহ করায় তিনি ধীরে ধীরে গ্রাহকদের মাঝে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠায় তার গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজার গ্রাহক। কিন্তু তাদের বিল জম জমা না দিয়ে তিনি সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও ফারুক ‘অটুট বন্ধন' নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে লোকজনকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ হতে প্রায় ৫০ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংর মতো বিল পরিশোধের জন্য ‘নব ক্যাশ’ নামক একটি সেবা চালু করেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।