বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাফল্যের দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর, বিরোধীদের তীব্র ক্ষোভ সংসদে

  •    
  • ৭ জুন, ২০২১ ১৯:৩৩

‘কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি বেহাল হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে।’

সংসদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে এই মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন এই মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো।

সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনাসহ এর সংস্কার দাবি করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ে কর্তৃত্ব নেই বলে অভিযোগ তোলেন তারা। যদিও মন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেন, ‘তারা ভালো করছেন। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুবই সফলতা দেখিয়েছে।’

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি বেহাল হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে।

‘বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকায় এক পদে ৫০ জন চিকিৎসক, আর জেলা-উপজেলায় চিকিৎসক নেই। লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছেন। লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে পারলে এটা রোধ করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কবে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে, সেটা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। প্রয়োজনে টিকা আনা বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু সজাগ থাকতে হবে, যেন ‍দুর্নীতি না হয়।

‘বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার কোম্পানি টিকা এনেছে। ভারত কেন চুক্তির বরখেলাপ করল? ২০ লাখ মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। তাদের আরেক ডোজের কী হবে, ঠিক নেই।’

বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে। জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে বরাদ্দ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। করোনাকালে ভারত স্বাস্থ্য খাতে আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। করোনাকালেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। আবার যেটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাও ব্যবহার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘১০ মাসে স্বাস্থ্য খাতে এডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এখন আবার নতুন বরাদ্দ চাইছে। কেন ৭৫ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে, তার জবাব স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’

রুমিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু দেড় বছরে মাত্র পাঁচটি জেলায় নতুন আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এখনও ৪৫টি জেলায় আইসিইউ নেই।’

তিনি বলেন, ‘এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়ীরা অনেকে মনে করতেন, সর্দি-কাঁশি হলেও দেশে চিকিৎসা নিতে হবে না। করোনা দেখিয়েছে দেশের চিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আফজাল-মালেকরা অনিয়ম করছে রূপকথার গল্পের মতো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখানে অনেক মালেক, আফজালের ছড়াছড়ি। একজন মহিলা উপ-সচিবের কানাডাসহ তিনটা দেশে বাড়ি আছে।’

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার সমালোচনা করে রওশন আরা মান্নান প্রশ্ন রাখেন, ‘একজন নারী সাংবাদিক অন্যায় করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেয়া হলো না কেন? কেন তাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো? আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেয়া হলো, নিজেরা কেন অত্যাচার করলো, দেশবাসী এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা করছেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনার তো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে।

‘হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। এখন দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে আনা হচ্ছে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন। পাঠানো হচ্ছে উপজেলায়। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না। লক্ষ কোটি টাকা যাচ্ছে। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছেন না।’

তিনি বলেন, ‘চুরি-ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যায়। কিন্তু আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেয়া হলো- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাকে (রোজিনা ইসলাম) ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হলো। তাকে টয়লেটে যেতে দেননি। অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা। তাকে এভাবে হেনস্থা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বলল। আমাদের মুখটা কোথায় গেলো? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আসলে কথা বলে লাভ কী। কার কথা কে শুনে। আর আমাদের কথা কেউ বিশ্বাসও করে না। এজন্য কথা বলতেও চাই না।’

বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চিপে ধরে হেনস্তা করেছেন, এটা হতে পারে না।’

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা একটি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দেড় বছর যাবৎ করোনা চলছে। তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’

সাফল্যের দাবি মন্ত্রীর

করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওষুধের কোনও ঘাটতি হয়নি। অক্সিজেনের অভাব কখনোই হয়নি। আমেরিকায় যে চিকিৎসা এখানেও একই চিকিৎসা হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান আছে। এসব কারণে মৃত্যুর হার দেড় শতাংশ। পৃথিবীতে এই হার আড়াই শতাংশ।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে করোনা বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আরও অনেক ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হবে। প্রতিটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিকার জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা করে লাগবে। করোনার সময়ও প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এটা সরকার বহন করেছে। যারা আইসিইউতে ছিল, তাদের জন্য সরকার ৫০ হাজার টাকা করে খরচ করেছে।’

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ খুবই সফলতা দেখিয়েছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ কারণে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক।’

এ বিভাগের আরো খবর