রাজধানীর মিরপুরে জালিয়াতি করে দেড় হাজার তিতাস গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মো. ওমর ফারুককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর মিরপুর-২-এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন বছর আগে ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে শুরু হয় একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান চালু করেন মো. উমর ফারুক, যার পৈত্রিক ঠিকানা নোয়াখালীর কবিরহাট।
ধীরে ধীরে এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠে ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’। এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহক নিয়মিত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল দিতেন ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বিল নেয়ার সময় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রশিদ সরবরাহ করতেন ফারুক।
তবে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উধাও উমর ফারুক। এলাকায় তার প্রতিষ্ঠানের তিনটি দোকানের প্রতিটিতেই ঝুলছে তালা।
আরও পড়ুন: জালিয়াতের ‘রাজা’ ফারুক, হতবাক দেড় হাজার তিতাস গ্রাহক
এর পরপরই তিতাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে জানায়, বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের গ্যাসের বিল দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া। এ কারণে শুরু হচ্ছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান। এরপরেই বেরিয়ে আসে উমর ফারুকের ভয়ংকর প্রতারণার তথ্য।
তার কাছে প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের জমা দেয়া বিল দেয়া হয়নি তিতাসে। একেকজনের বকেয়া পড়েছে দেড় থেকে দুই বছরের বিল।
আনুমানিক ১০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে উধাও হন ফারুক। এতদিন আত্মগোপনে থাকার পর র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি।
কীভাবে এলো ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স
ফারুকের জালিয়াতি নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা। এতে উঠে আসে নানা তথ্য।
মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওমর ফারুক কীভাবে ব্যবসা শুরু করলেন, তা জানতে এলাকায় অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারেক মোল্লার মোড় এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন ফারুক। তবে এর আগে ওই এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তার একটি ছোট দোকান ছিল। সেখানে তিনি সীমিত পরিসরে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা শুরু করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, ফারুক ২০১৮ সালের আগে যে ভবনের নিচ তলায় ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন, সেই ভবনের মালিকের বউকে বিয়ে করেন তিনি।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আহম্মদপুরের ওই বাসার ঠিকানায় গিয়ে জানা যায়, ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ফারুকের পরিবার থাকে। সেখানে গেলে এক তরুণ নিউজবাংলাকে জানান, ওমর ফারুক তার সৎ বাবা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে বিয়ে করেন ফারুক। এরপর থেকে ফারুক ও তার স্ত্রী এই ভবনে থাকেন না।
তারা কোথায় থাকেন জানতে চাইলে ওই তরুণ দাবি করেন, দুজনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় এ বাড়ির কেউ তাদের ঠিকানা জানেন না।
ওমর ফারুকের স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে, তার বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাটের চাপরাশির হাটে।
ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের ওয়েবসাইটে ঢুকে যোগাযোগের একটি ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সেখানে কল করা হলে জাকির হোসেন নামে একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত সেপ্টেম্বর থেকে এই জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সে চাকরি করেছি। বেতন না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেই। তবে ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স এখনও আমার নম্বরটা ব্যবহার করছে।’
জাকির দাবি করেন, বকেয়া বেতন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ তার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল।
তিনি জানান, শ্যামলীর ২ নম্বর রোডে হাবিবি মসজিদের পাশে ফারুকের একটি অফিস আছে। সেখান থেকে বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ হতো।
জাকিরের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী, শ্যামলীর ২ নম্বর সড়কে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে, সেখানকার ৩৫/এফ ৬/এ ভবনের আট তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও আট বছরের এক সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ওমর ফারুক। তবে সেখানে তার কোনো অফিস নেই।