চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ মামলার মূল আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ নাছের, আইনজীবী নুরুল আনোয়ার, আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী ও আইনজীবী সহকারী সৌরভকে আগামী ২৮ জুন আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে জেলে থাকা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরসহ তিন আইনজীবী ও এক আইনজীবী সহকারীকে তলব করেছেন আদালত।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবী নামের এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা করা হয়।
ওই মামলায় কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নামে এক নারী গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুম আক্তার জামিন পান।
এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কুলসুমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
রায়ের দিন আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনু নামের এক নারীকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। তখন আদালত তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
এর মধ্যে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল কুলসুম আক্তার হাইকোর্টে আপিল করেন। একই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন। কিন্তু চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি আবেদন করেন।
ওই আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে পাঠানো আসামি প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নন।
এ আবেদনের শুনানি শেষে আদালত কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতের হাজির করে তার জবানবন্দি নেয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু; তিনি কুলসুম নন।
মিনু বলেন, মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে জেলে ঢোকান। তিনি প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে চিনেন না।
আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামী কুলসুমী ও সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি উপনথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে শামিলের জন্য পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনাটি সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। ঘটনাটির বিস্তারিত সংগ্রহ করে সুপ্রিম কোর্টের আইজনীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের নজরে আনেন।
হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে লিখিত আকারে বিষয়টি জানাতে নির্দেশ দিয়ে শুনানির দিন ঠিক করে। কিন্তু এরই মধ্যে লকডাউন শুরু হলে আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপন করেন আইনজীবী শিশির। হাইকোর্টের এই বেঞ্চ সোমবার মিনুকে মুক্তির আদেশ দেয়। একই সঙ্গে প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দেয়।