করোনা মহামারিতে সব দিকেই টানাপোড়েন। চলছে ব্যয় সংকোচন, কৃচ্ছ্রসাধন। তবে এই সংকটের মধ্যেও কমেনি রোহিঙ্গাদের সহায়তা। এনজিওদের মাধ্যমে মানবিক এ কাজকে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিচ্ছে রাষ্ট্র ও বিশ্ব।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সহায়তায় নানা খাতে ব্যয় করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও)। প্রতিমাসে গড়ে এনজিওদের মাধ্যমে আসছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সহায়তা।
আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছরে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ১৯৪টি এনজিও ১ হাজার ৩৯৯টি প্রকল্পে ব্যয় করেছে এই অর্থ। এনজিও ছাড়াও জাতিসংঘের নানা সহায়তা পাচ্ছে আশ্রিতরা।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, করোনা মহামারির মধ্যেও কমেনি রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের ব্যয়। দেশি-বিদেশি এনজিও এগিয়ে এসেছে। করোনার আগেও মাসে গড়ে ২০০ কোটি টাকার সহায়তা আসত। এখনও একই পরিমাণ সহায়তা আসছে।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য সাড়ে তিন বছরে ১৩৮টি দেশি এনজিও ৯৯০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর আন্তর্জাতিক ৫৬টি এনজিও ৪০৯টি প্রকল্পে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ১ লাখ টাকা।
এর মধ্যে শুধু মার্চে ব্যয় হয়েছে ২৮৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। দেশি ৩৪টি এনজিও ৮৬টি প্রকল্পে ব্যয় করেছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর আন্তর্জাতিক ১৯টি এনজিও ৩২ প্রকল্পে ১৫১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, এতদিন রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহেই ব্যয় হয়েছে বেশি অর্থ। কিন্তু বর্তমানে তাদের বাসস্থান নির্মাণেই বেশি ব্যয় করেছে এনজিওগুলো।
এনজিও ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছরে রোহিঙ্গাদের বাসস্থান নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত মোট নির্মাণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭টি বাসস্থান। ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় খাত হচ্ছে স্বাস্থ্য। এই খাতে স্বাস্থ্যযন্ত্র, সেবা এবং ওষুধে ব্যয় করা হয়েছে ২৬৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
খাদ্য সরবরাহে ব্যয় হয়েছে ২২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কম্বলসহ পোশাক বিতরণ হয়েছে ৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার। ৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার বিতরণ হয়েছে ঘর-গৃহস্থালিসামগ্রী।
এ ছাড়া, স্যানিটারি ল্যাট্রিন বিতরণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৯২টি, বাথরুম ১৬ হাজার ২০১টি এবং টিউবওয়েল নির্মাণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৩৮৬টি। যতই দিন যাচ্ছে চাহিদা এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে।
বর্তমানে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে ৫৭টি এনজিও। এর মধ্যে দেশের ৩৬টি এনজিও কাজ করেছে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। আর আন্তর্জাতিক ২১টি এনজিও ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করতে আগ্রহী অনেক এনজিও। নতুন নিবন্ধন পেতে এনজিও ব্যুরোতে জমা পড়েছে প্রায় অর্ধশত আবেদন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনজিও ব্যুরো।
এনজিও ব্যুরো সূত্র জানায়, নতুন আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন নতুন করে কোনো ধরনের এনজিও দরকার এবং তাদের কর্মপরিধি পর্যালোচনা করা হবে। অর্থ ব্যবহারের সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে এনজিও ব্যুরোর অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অর্থায়নের ক্ষেত্রে যেসব সহায়তা আসছে তার শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। জনবল সংকটের কারণে এনজিও ব্যুরো বিষয়গুলো মনিটরিং করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিচ্ছে।