বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফিলিস্তিনের পাশে আছি, সহযোগিতা করে যাব

  •    
  • ২ জুন, ২০২১ ২০:১১

‘আমরা আমাদের ফিলিস্তিনের ভাইদের সাথে সব সময়ই আছি। আমাদের সরকার থেকে যে কোনো সহযোগিতা আমরা অতীতেও করেছি, এটা আমরা অবশ্যই করে যাব। ইসরায়েলের এই ঘৃণ্য আক্রমণের তীব্র নিন্দা আমরা জানাই।’

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ঘৃণ্য হামলার পরেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো চুপ কেন তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলাদেশ সব সময় তাদের পাশে আছে। ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করে যাবে।

বুধবার বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন সংসদের রীতি অনুযায়ী আনা শোক প্রস্তাব পরবর্তী আলোচনায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই অমানবিক। ছোট শিশুদের কান্না এবং তাদের সেই অসহায়ত্ব, মাতৃপিতৃ হারা হয়ে ঘুরে বেড়ানো সেটা সহ্য করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘ইজরায়েল কর্তৃক এভাবে একের পর এক হত্যা… এর আগেও হত্যাযজ্ঞ তারা চালিয়েছে। আমরা আগেও এ হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দাও জানাই। আজকে বিশেষ করে ছোট শিশু যারা আহত হয়, তাদের উপর জুলুম, তারা অত্যাচারিত হয়, তারা মা-বাবা হারায় এটা সত্যিই দুঃখজনক।’

ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে গোলযোগ চলছে ১৯৮৮ সালে ইহুদিদের রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। সম্প্রতি আল আকসা মসজিদে সংঘর্ষের পর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রকেট হামলার পর পূর্ণ শক্তিতে পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল। বিমান হামলায় একের পর এক গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বেশ কিছু বহুতল ভবন। প্রাণ হারায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি, যার একটি বড় অংশই শিশু।

এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে ২১ মে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল। থামে ধ্বংসযজ্ঞ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অনেক সময় মানবতার কথা বলে তারা এ সময় চুপ থাকে কেন? আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা এখন কথা বলে না কেন? এটাই আমার প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ফিলিস্তিনের ভাইদের সাথে সব সময়ই আছি। আমাদের সরকার থেকে যে কোনো সহযোগিতা আমরা অতীতেও করেছি, এটা আমরা অবশ্যই করে যাব। ইসরায়েলের এই ঘৃণ্য আক্রমণের তীব্র নিন্দা আমরা জানাই।’

সংসদ আধিবেশষে শোক প্রস্তাব পরবর্তী আলোচনায় বাংলা একাডেমির সাবের মহাপরিচালক শামসুজ্জামানকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। শামসুজ্জামান খান সাহেব, আজকে জাতির পিতার অসামাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচা, আমার দেখা নয়া চীন প্রত্যেকটা বই লেখায় আমরা কিন্তু একসাথে কাজ করেছি।

‘আজকে খুব দুর্ভাগ্য, বেবি মওদুদ, সেও সংসদ সদস্য ছিলো। তিনিও আমাদের মাঝে নাই। জামান ভাই সর্বশেষ তিনিও চলে গেলেন। আমরা কয়েকজন মিলে একসাথে যে কাজ করতাম, একেএকে কিন্তু সবাইকেই হারালাম। জাতির পিতার আরেকটি লেখা, স্মৃতিকথা সেটার কাজটাও সংশোধনীর পর্যায়ে শামসুজ্জামান খান সাহেবই করে গেছেন। আমরা এই বইগুলো যখন বের করি তিনি সব সময় পরামর্শ দিতেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা জিনিস সংশোধনের কাজ সেখানে কোন বানান ভুল আছে কিনা তা তিনি খুব যত্নের সাথে দেখে দিতেন। আমাদের সকলের জন্য আলাদা আলাদা কলম ছিলো। শামসুজ্জামান খান সাহেবের জন্য একটা লাল কলম, আমার জন্য একটা সবুজ কলম আর বেবির জন্য একটি কালো কলম রাখা ছিলো। এভাবে আমরা যে যখন যেটা পারতাম সংশোধন করে নিতাম।

‘প্রত্যেকটা বই যে আমরা প্রকাশ করেছি তাতে তার অবদান রয়েছে। বাংলা একাডেমির উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ তিনি করেছেন। তার পরে আমরা যখন হাবিবুল্লাহ সিরাজী সাহেবকে দায়িত্ব দিলাম তিনিও কাজ করতে শুরু করলেন। কিন্তু পরপর দুজনই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এটা আসলে খুব দু:খজনক যে একে একে সবাইকে আমরা হারাচ্ছি।’

একাদশ সংসদের দুই সদস্য আব্দুল মতিন খশরু ও আসলামুল হকেরও স্মৃতি চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা বাজেট অধিবেশন শুরু করছি। কিন্তু আমাদের শুরু করতে হচ্ছে শোক প্রস্তাব দিয়ে, এটাই হচ্ছে সব থেকে দু:খের। আমরা এই চলমান সংসদে, করোনা সংক্রমণ শুরু পর থেকে অনেক সাথীকে হারিয়েছি।

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে হত্যার পর ইমডেমনিটি অর্ডিনেন্স দিয়ে খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। আমি আর রেহানা শুধু বেঁচে ছিলাম। বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার আমাদের ছিলো না। ছিয়ানব্বই সালে সরকার গঠনের পর সেই ইমডেমনিটি অর্ডিনেন্স আমরা বাতিল করি, সেই বিল উপস্থাপন করেছিলো মতিন খশরু। তার সেই আবেগভরা বক্তৃতা এখনো আমার কানে বাজে।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচন যখন করতে যায়, আমি তাকে বলেছিলাম বেশি ঘোরাঘুরি না করতে। কিন্তু তার তখন একটা আগ্রহ ছিলো তাকে জিততেই হবে। আর সারা বাংলাদেশ সে সফর করে। তারপরেই সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আমি প্রতিদিন তার খবর নিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাকে আর বাঁচানো গেলো না। আমাদের ছেড়ে সে চলে গেছে।

‘আসলামুল হক আমাদের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম সব কিছুতেই সে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং এলাকার মানুষের জন্য সে কাজ করেছে। আর এজন্য বারবার সে নির্বাচিতও হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য তার অন্যরকম একটা দরদ ছিলো এবং এলাকার উন্নয়নের জন্যও সে নিবেদিত প্রান ছিলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কতজন গণপরিষদ সদস্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচিত, তাদেরকেও আমরা হারিয়েছি। আজকে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি, সেই সংবিধানে তাদেরই সাক্ষর রয়েছে। এছাড়াও আওয়ামীলীগের বহু নেতাকর্মী ও সাবেক এমপিকে আমরা হারিয়েছি।’

‘আসলে জীবনটাই হয়েছে এমন কখন যে কে আছে কখন যে কে নাই তার কোন হিসেব নাই। বিশেষ করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউটা যখন এলো আমরা চেষ্টা করলাম কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু হঠাৎ আবার বর্ডারের যে জেলাগুলি সেখানে আবার দেখা গেছে।’

করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কিন্তু তারপরেও আমি বলবো, আমাদের স্বাস্থ্যবিধিটা যেনো সকলেই মেনে চলেন। এটা বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে আমাদের একটা আহ্বান থাকবে।

‘টিকাদান থেকে শুরু করে সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তারপরেও নিজেরা সুরক্ষিত থাকতে হবে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শোক প্রস্তাব সংসদে গৃহিত হওয়ার পর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়। করা হয় বিশেষ দোয়াও। এরপর সংসদের রীতি অনুযায়ী সংসদের কার্যক্রম দিনের মতো মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর