হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার দোসরদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন প্রয়াত আমিরের অনুসারীরা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এই সংবাদ সম্মেলনের চমক ছিল বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটির নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আবদুল হামিদের অংশগ্রহণ।
মধুপুরের পীরের পক্ষ বদল নিয়ে আরও পড়ুন: বাবুনগরীবিরোধী জোটে এবার মধুপুরের পীর
শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ মূলত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। আল্লামা শফীর মৃত্যু ঘটনায় পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই যে তদন্ত করেছে, সেটিকে সঠিক আখ্যা দিয়ে এর আলোকে ব্যবস্থার দাবি করেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রসায় ব্যাপক হাঙ্গামায় অসুস্থ হওয়ার পর ১৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মারা যান আল্লামা শফী। বর্তমান আমির বাবুনগরীর অনুসারীরা এই হাঙ্গামা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তারা আল্লামা শফীকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন আর অক্সিজেনের নল ছিঁড়ে ফেলেন বলেও জানান শফীর স্বজনরা।
শফীকে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা করেন তার শ্যালক মঈন উদ্দিন। গত ১২ এপ্রিল সেই মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এতে অবহেলাজনিত হত্যার সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে পিবিআই।
মামলায় মোট ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বল হয়, পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তাহলে বাবুনগরীর গ্রেপ্তার চাইছেন কি না, এমন প্রশ্নে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা গ্রেপ্তারের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে পরিষ্কার করেই বলেছি। অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের তা না বোঝার কথা না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের সম্পর্কে বলেছি, যাদের নাম এই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া যাদের নাম আসে নাই, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আমরা তাদের গ্রেপ্তার চাই এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে যা এসেছে সেটাই বাস্তব এবং এই তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য়।’
এই মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা শফীর পরিবারের সদস্য ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান, প্রয়াত আমিরের রেখে যাওয়া সব দ্বীনি ও সামাজিক অঙ্গন থেকে তার বিরোধীদের অপসারণ, অবিলম্বে কওমি মাদ্রাসা, মক্তব ও হিফজ বিভাগ খুলে দেয়া এবং সহিংসতায় জড়িত নয়, এমন আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবিও জানানো হয়।
বাবুনগরীর আহ্বায়ক কমিটি ‘নিয়মবহির্ভূত’
এর আগে হেফাজতের শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সাহিত্য সম্পাদক নূরুল ইসলাম জাদিদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাবুনগরী যে সম্প্রতি হেফাজতের যে আহ্বায়ক কমিটি করেছেন, সেটি অবৈধ।
এতে বলা হয়, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (রহ.) চরমবিরোধী ও বিদ্বেষীদের দ্বারা যিনি হেফাজতের কথিত আমির হয়েছিলেন, তাকে এ দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তিনি জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তথাকথিত এই অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।
‘আমরা মনে করি, কথিত হেফাজত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি পকেট কমিটি গঠিত হয়েছিল, যেখানে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মূল অনুসারী হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের বাদ দেয়া হয়েছিল।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর দুই মাস পর গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতের সম্মেলনে বাবুনগরীকে আমির ঘোষণা করা হয়। সেই সম্মেলনে শফীপন্থিদের আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
সম্মেলনের আগেই শফীপন্থিরা এই সম্মেলন স্থগিতের দাবি জানিয়েছিলেন। আর সম্মেলনের পর নতুন কমিটি করার কথা জানিয়েছিলেন। তবে সে ঘোষণা আর আসেনি।
এর মধ্যে মার্চের শেষ এবং এপ্রিলের শুরুতে হেফাজতের সহিংসতার পর গ্রেপ্তার অভিযান এবং বাবুনগরীর কমিটি ভেঙে দেয়ার পর শফীপন্থি নেতারা আবার সামনে আসছেন।
বাবুনগরীর আহ্বায়ক কমিটি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দেশবাসী বুঝতে পেরেছে, এটি হেফাজতের কোনো আহ্বায়ক কমিটি নয় বরং মামা-ভাগনের ফটিকছড়ি পকেট কমিটি। শোনা যাচ্ছে, এই আহ্বায়ক কমিটিই আবারও কোনো কাউন্সিল না করে নিজেদের পছন্দমাফিক লোকদের মনোনয়নের মাধ্যমে নতুন আরেকটি অবৈধ কমিটি জন্ম দেয়ার নীলনকশা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
এত দিন চুপ কেন?
এক প্রশ্নে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কখনোই নিশ্চুপ ছিলাম না, আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছি।’
আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব পদে পুনর্বহাল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনাস মাদানী সাহেব যে দায়িত্বে ছিলেন, সে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না এবং আইনগত কোনো বৈধতা ছিল না।… অতএব আনাস মাদানী সাহেবকে সেখানে পুনর্নিয়োগ বা বহাল করার কোনো প্রশ্নে নেই। কারণ তিনি তো সেখানে আছেনই। তবে শারীরিকভাবে সব সময় উপস্থিত না-ও থাকতে পারেন।’