রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে সেনাশাসনের সুযোগ কাজে লাগাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ আহ্বান জানান।
এর আগে বাংলাদেশ সফরে আসা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও ও গিলিয়ান ট্রিগসের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকের পর মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারে এখন মিলিটারি সরকার দেশ চালাচ্ছে। তাই এই সরকারের সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
‘আমি ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিদের বলেছি যে, মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেসব বিষয় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে দেখানো হোক, যাতে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্বাস জন্মায়।’
ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা গত সোমবার রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ভাসানচরের আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন। ওই সময় একাধিক রোহিঙ্গা অপ্রত্যাশিত আচরণ করেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা হতাশা থেকে এমন আচরণ করেছে।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি গিলিয়ান ট্রিগস বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বড় শরণার্থী শিবিরগুলোর একটি। এখানকার পরিবেশ খুব ভালো।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পুরোটাই নির্ভর করছে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার ওপর। তবে এখন মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল।
ভাসানচর ইস্যুতে গিলিয়ান ট্রিগস বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরটি আমরা ঘুরে দেখেছি এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। ভাসানচর ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাব।’
ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিপীড়িত এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মিয়ানমারের।’
ইউএনএইচসিআরের দুই প্রতিনিধির কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সেনা সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না। এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি তারা।
২০১৭ সালের আগস্টে সেনাচৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে সেনা ও তাদের মিয়ানমারের দোসররা। সে সময় থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।