ভাসানচরের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকে বাংলাদেশ সরকারের ‘এক্সিলেন্ট প্রজেক্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বুধবার বৈঠক করেন। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা বলেন, ভাসানচরে নেয়া প্রকল্প কক্সবাজারের ক্যাম্পের পরিবেশ ও ব্যবস্থা থেকে অনেক ভালো। আমরা এখানে রোহিঙ্গাদের সাময়িক স্থানান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে সোমবার সকালে নোয়াখালীর ভাসানচরে যান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার। তারা হলেন ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রম পরিচালনাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও এবং সুরক্ষাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার গিলিয়ান ট্রিগস।
রোহিঙ্গাদের অবস্থান পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বিক্ষোভের মুখোমুখি হন। এ বিষয়ে তারা বলেন, রোহিঙ্গারা চার বছর হলো নিজভূম ত্যাগ করে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে। তাদের কর্মসংস্থান নেই, বাচ্চাদের স্কুলিং বা শিক্ষার সুযোগ নেই, মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের সুযোগ নেই। সেই হতাশার জায়গা থেকে কেউ কেউ এটা করেছে। এটা আমরা আন্তরিকভাবেই নিয়েছি।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলেন, আমারা ভাসানচরের পুরো প্রকল্প ঘুরে দেখেছি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাও বলেছি। তারা তাদের কিছু দাবির কথা আমাদের জানিয়েছে। আমরা তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকব এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কেও পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তারা সে দেশে সর্বোচ্চ নিপীড়িন, নির্যাতনের শিকার। তাদের নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নেয়া মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া হতাশাজনক। সেখানে ঘটে যাওয়া সেনা অভ্যুত্থান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। এসব ঘটনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকেও জটিলতার মধ্যে ফেলেছে।
বাংলাদেশে চার দিনের সফরে আসা দুই কর্মকর্তা সোমবার সকালে ঢাকা থেকে রোহিঙ্গাদের নতুন আশ্রয়স্থলের উদ্দেশে রওনা হন। ওই দিন বিকেলে তারা ভাসানচর থেকে হেলিকপ্টারে কক্সবাজার যান এবং মঙ্গলবার সারা দিন কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার পর জাতিসংঘের কোনো সংস্থার সদর দপ্তরের প্রতিনিধিদের এটাই প্রথম সফর।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, সফরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, দেশি–বিদেশি সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিসহ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় যুক্ত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন দুই কর্মকর্তা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শরণার্থী সংস্থার দুই সহকারী হাইকমিশনারের এই বাংলাদেশ সফর।
ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ১৮ হাজার ৪১৬ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।