বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২ জুন, ২০২১ ০৮:৫৯

‘পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী আমাদের ছিল না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। গ্লাভস আর নিরাপত্তা বেল্ট কিছু পরিমাণে ছিল। তবে হেলমেট আর বুট একেবারেই ছিল না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে ছয়টি বহুতল হল নির্মাণের কাজ। তবে নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী। এতে প্রায়ই শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

সবশেষ এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর সবার টনক নড়ে। প্রতিবাদে নামে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর কিছু সুরক্ষাসামগ্রী আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

সুরক্ষাসামগ্রী না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন শ্রমিক নিহত হওয়া নির্মাণাধীন হলটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন ২২ নম্বর হলের ছয়তলা থেকে পড়ে গত ২৭ মে শাহের আলী নামে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নির্মাণাধীন হলটিতে এখন আটতলার কাজ চলছে। কিন্তু সেখানে নির্মাণ করা হয়নি কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী (ক্যানোপি)।

এ ছাড়া ৩০ মে শহীদ-সালাম বরকত হলে সংস্কার কাজ করার সময় নিচে পড়ে আবদুর সোবহান নামে আরেক শ্রমিক গুরুতর আহত হন।

শ্রমিকরা জানান, তাদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট, বেল্টসহ পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়নি। তাই সামান্য অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনগুলো আমরা এরই মধ্যে পরিদর্শন করেছি। হতেগোনা কয়েকটি হেলমেট ছাড়া কিছুই পাইনি। নেই কোনো বুটও। নেই অত্যাবশ্যকীয় বেষ্টনী।

‘যদি নির্দিষ্ট তলা পরপর বেষ্টনী থাকত, তাহলে এই মৃত্যু নাও হতে পারত। নিরাপত্তা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণেই একজন শ্রমিককে প্রাণ হারাতে হলো। নির্মাণাধীন হলের তদারকি কমিটি ও প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ নম্বর হলের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, ‘দুর্ঘটনার আগে আমাদের প্রায় ১০০ জন শ্রমিকের জন্য কোনো হেলমেটই ছিল না। দুর্ঘটনার দিন রাতে আটটি হেলমেট আনা হয়েছে। নিরাপত্তা বেল্ট ছিল মাত্র তিনটি। গ্লাভস যা ছিল তাও পর্যাপ্ত না। আর বুট তো একেবারেই ছিল না।’

ওই হলেরই আরেক শ্রমিক জানান, তারা একাধিকবার সুরক্ষাসামগ্রীর দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রকল্পের সুপারভাইজার তাদের আশ্বাস দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি।

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের কী কী সুরক্ষাসামগ্রীর প্রয়োজন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২০ অনুযায়ী, শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত হেলমেট, নিরাপত্তা বেল্ট, গ্লাভস, বুট এগুলো আবশ্যক। এ ছাড়া ভবন যখন ২ দশমিক ৪ মিটার উঁচু বা একতলা সম্পন্ন হয় তখনই নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হয়। আরও উঁচু হলে নির্দিষ্ট তলা পর পর দিতে হয়।

‘বেষ্টনীগুলো পথচারি ও শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্যই দেয়া হয়। যেই শ্রমিক ছয়তলা থেকে পড়ে মারা গেলেন, যদি বেষ্টনী থাকত তাহলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটত না।’

হলটির নির্মাণ কাজ করছে নূরানী কনস্ট্রাকশন নামের একটি কোম্পানি। নির্মাণাধীন হলটির ম্যানেজার খোরশেদ আলম খোকন বলেন, ‘একজন শ্রমিক মারা গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, আমরা তার জন্য যা করার দরকার তা করব।’

সুরক্ষাসামগ্রীর বিষয়ে বলেন, ‘পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী আমাদের ছিল না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। গ্লাভস আর নিরাপত্তা বেল্ট কিছু পরিমাণে ছিল। তবে হেলমেট আর বুট একেবারেই ছিল না।’

নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিষয়ে বলেন, ‘হল তৈরির নকশা অনুযায়ী, ১০ তলা ভবনে একটি মাত্র বেষ্টনী দেয়ার কথা, তাও পাঁচতলায়। ঈদের আগেই পাঁচতলায় বেষ্টনী দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু জটিলতায় আর দেয়া হয়নি।’শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘তদারকি ও টেকনিক্যাল কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করার কথা।’

নির্মাণাধীন ভবনেও কখনও যায়নি তদারকি কমিটি

শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার হলটির নির্মাণ কাজের তদারকি কমিটিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলী ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির।

কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, পরামর্শ না মানায় তারা এই সম্পর্কিত কোনো মিটিংয়ে যান না। তদারকির জন্য নির্মাণাধীন ভবনেও কখনও যাননি। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রড বাঁধাইসহ বিভিন্ন কাজ পর্যবেক্ষণে তাদের যে সব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অভিজ্ঞ নন।

তাহলে পদত্যাগ কেন করছেন না জানতে চাইলে তারা জানান, রাজনৈতিক নানা কারণে পদত্যাগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জানান, শ্রমিকের মৃত্যুর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তথা তদারকি কমিটিরও রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা প্রকল্পের মধ্যে শ্রমিকরা হিসেবের মধ্যেই নেই। কর্তৃপক্ষ যেকোনোভাবে টাকা বানাতে ব্যস্ত। শ্রমিকদের নিয়ে তো তাদের মাথাব্যথা নেই। গুণগতমান, কাজের পরিবেশ, আর্থিক বিষয়সহ সবকিছুই তদারকি করার কথা ছিল তদারকি কমিটির। কমিটি যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত তাহলে প্রকল্প এভাবে চলতেই পারত না।’

এ বিভাগের আরো খবর