সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক ডুবে গেলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এটিকে জলাবদ্ধতা বলে মানতে রাজি নন। তার মতে, বৃষ্টিতে পানি জমলেও দেখতে হবে সেটা দ্রুত অপসারণ করা গেছে কিনা।
মঙ্গলবার সকালে টানা তিন ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এ বছর এটাই ঢাকার সর্বোচ্চ বৃষ্টি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮৫ মিলিমিটার।
সকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকা ডুবে যায় হাঁটু পানির নিচে। ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। তবে মেয়র একে জলাবদ্ধতা বলতে চান না। তিনি এই সংকট নিরসনে আরও সময় চেয়েছেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘সাধারণত কোনো স্থানে তিন ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকাকে জলাবদ্ধতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়। আজকের বৃষ্টিতে আমরা তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রায় শতভাগ পানি নিষ্কাষণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
মেয়র বলেন, তাদের লক্ষ্য এক ঘণ্টার মধ্যে পানি নিরসন করা।
বেশ কয়েকটি জায়গায় জলজট হলেও বিগত সময়ের জলজটের পরিমাণ ও স্থানের তুলনায় তা অনেকাংশে কম দাবি করে মেয়র বলেন, ‘বিগত পাঁচ মাসে আমাদের গৃহীত কার্যক্রম এবং আজ সকাল থেকে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুততার সাথে নেমে যায়।’
তাপস বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) বৃষ্টিতে যেসব জায়গায় জলজট সৃষ্টি হয়েছে, আমরা সেসব স্থানকে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেব এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতাকে একটি সহনীয় মাত্রায় আনতে সক্ষম হব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের প্রত্যাশা হলো, দীর্ঘমেয়াদে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া।’
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নগরবিদ আখতার মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, আসলে জলাবদ্ধতার কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে জল নিষ্কাশনের জন্য সময় ও বৃষ্টির পরিমাণটা বড় বিষয়। মাত্র তিনি ঘণ্টায় যদি ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তবে ঢাকা শহরের যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে, সেই পানি সঙ্গে সঙ্গে অপসারণের অবস্থা নেই। সেইরকম ড্রেনেজ ক্যাপাসিটি এই মুহূর্তে নেই।
দুইটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মূলত জলনিষ্কাশন ও কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন বেশি জরুরি। সেটি অবশ্য সিটি করপোশনের দায়। আজকে অনেকগুলো পকেট জায়গাতে পানি জমে ছিল। আর এর কারণ ড্রেনগুলো বন্ধ থাকে। ফলে পানি খালে গিয়ে পৌঁছুতে পারে না। যদি তারা এটি পরিষ্কার করতে পারে, তবে পানি সহজে নেমে যাবে। মূলত নালাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।’
দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে খালগুলির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর ২ জানুয়ারি থেকে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর, কালুনগর খালসহ এগুলোর শাখা-প্রশাখা এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছি।’
মেয়র বলেন, ‘ইতোমধ্যে এসব খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে আমরা ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ও ৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন পলি অপসারণ করেছি। এছাড়া ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পাওয়া অচল দুটি পাম্প স্টেশনের তিনটি পাম্প মেশিন সচল করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাকি তিনটি সচল করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া বদ্ধ নর্দমা ও আমাদের উন্মুক্ত নর্দমাগুলো পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে এবং এই জুনের মধ্যেই তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রমের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলো দ্রুত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। তা এখনও হয়নি। এছাড়া ডিএনডি বাঁধ, হাতির ঝিল প্রকল্প, মেট্রোরেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি।’