বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে ৫০০ নারীকে পাচার করেছে চক্রটি

  •    
  • ১ জুন, ২০২১ ২২:০৯

সেফ হাউসে তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এবং জোর করে মাদক সেবন করতে বাধ্য করা হতো। এরপর তাদের ওপর যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হতো। আর এই ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে বাধ্য করা হতো যৌনকর্মীর কাজ করতে। চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সম্প্রতি বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতের কেরালায় নৃশংসভাবে যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাবের দাবি, বস রাফি গত আট বছরে ৫০০ নারীকে ভারতে পাচার করেছেন। এসব নারীকে আটকে রেখে মাদক সেবনে এবং যৌনকর্মীর কাজে বাধ্য করা হতো। এই চক্রের সদস্যসংখ্যা নারীসহ অন্তত ৫০ জন।

গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন রাফির অন্যতম সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা, ইসমাইল সরদার ও আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ভারতে ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ২৭ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় টিকটিক হৃদয় বাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়।

হৃদয় ইতিমধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তরুণীকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি এ জাতীয় ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ও র‍্যাব-৩-এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে চক্রের হোতাসহ ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চক্রটি উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাশের দেশে পাচার করত। দেশি-বিদেশিসহ প্রায় ৫০ জন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

টিকটক হৃদয় বাবু নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে একটি গ্রুপ খুলে বিভিন্ন বয়সের নারী ও তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই গ্রুপের যেসব তরুণী ছিলেন, তাদের মডেল বানানো ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করতেন। পরবর্তী সময়ে পাশের দেশের বিভিন্ন সুপার মল, সুপার শপ ও বিউটি পারলারে চাকরি দেয়ার কথা বলে দেশ থেকে তরুণী ও নারীদের বস রাফির সহযোগিতায় বিদেশে পাচার করতেন। পাচারের পর প্রথমে তাদের একটি সেফ হাউসে নেয়া হতো।

তিনি আরও বলেন, সেফ হাউসে তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এবং জোর করে মাদক সেবন করতে বাধ্য করা হতো। এরপর তাদের ওপর যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হতো। আর এই ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধভাবে সীমান্ত পার করানো হতো। প্রথমে ভিকটিমদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে আনা হতো। এরপর ভিকটিমদের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সেফ হাউসে রাখা হতো।

সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনসম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে সীমান্ত পার করা হতো। এরপর ভারতের এজেন্টরা সীমান্তের কাছে তাদের অন্য সেফ হাউসে রাখতেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সুবিধাজনক সময়ে এ নারীদের কলকাতার সেফ হাউসে পাঠানো হতো। এর পরের ধাপে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু পাঠানো হতো। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর বস রাফি তাদের গ্রহণ করে বিভিন্ন সেফ হাউসে রাখতেন। পরে ভিকটিমদের মাদক সেবনে বাধ্য করা হতো এবং অমানবিক নির্যাতন করে তাদের যৌনকর্মের পেশায় বাধ্য করা হতো। সেফ হাউসগুলো থেকে তাদের ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য খদ্দেরদের সরবরাহ করা হতো। এ ক্ষেত্রে পরিবহন ও খদ্দেরের নির্ধারিত স্থানে অবস্থানের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নেয়া হতো।

পাশের দেশের এজেন্ট তাকে খদ্দেরপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমিশন দিতেন। ক্ষেত্রবিশেষে নারীদের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হতো।

জিজ্ঞাসাবাদে রাফি বলেছেন, ‘ভারতে কিশোরগঞ্জের নির্যাতিত ওই নারী দুজন বাংলাদেশি নারীকে দেশে পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করায় তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। তাকেও বলা হয় সে যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে ধারণ করা ভিডিওটি স্বজনদের কাছে পাঠানো হবে।’

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, গ্রেপ্তার বস রাফির শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। আট বছর আগে থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার যাতায়াত রয়েছে। তিনি সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন, রিসোর্টের কর্মচারীর কাজ করেছেন এবং কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। দুই বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে হৃদয়ের সঙ্গে বস রাফির পরিচয় হয়। টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করেছেন।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভিকটিমকে পাচারের উদ্দেশ্যে টিকটক হৃদয়কে প্রলুব্ধ করেন। পরে বস রাফি তাকে গত বছরের অক্টোবর মাসে পাচার করে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে সেফ হাউসে রেখে ভিডিওটি ধারণ করেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী ম্যাডাম সাহিদার একাধিক বিয়ে হয়েছিল। সাহিদার দুই মেয়েও পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ওই দুই মেয়ে বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে অবস্থান করছেন।

‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তার এক মেয়েকে নির্যাতনে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। সাহিদা বাংলাদেশ এলাকায় একটি সেফ হাউস পরিচালনা করতেন। এই অবৈধ ব্যবসায় তিনি ১০ বছর ধরে জড়িত।

‘এ ছাড়া গ্রেপ্তার ইসমাইল ও আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ বস রাফির বিশেষ সহযোগী।’

বস রাফি সম্পর্কে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার বস রাফি আট বছর ধরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ছিলেন। প্রথমে সেখানে গিয়ে গাড়ি চালাতেন। পরে রিসোর্টে চাকরি নেন। তিনি তামিল ভাষায় খুবই দক্ষ। বেঙ্গালুরুতে যেসব হোটেল-রিসোর্টে অবৈধ কার্যক্রম হতো, সেসব হোটেলের লোকদের সঙ্গে রাফির ভালো সম্পর্ক হয়।

‘মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ভারতে নারীদের পাচার করা হতো। পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি নারীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হতো। একটি গ্রুপে মধ্যবিত্তদের, আরেকটিতে রাখা হতো নিম্ন মধ্যবিত্তদের।

‘মধ্যবিত্ত নারীদের ভারত থেকে দুবাইয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখানো হতো।’

এ বিভাগের আরো খবর