আদালতে জবানবন্দি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তিনি জিডি করেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব মিল্কি নিউজবাংকে বলেন, ‘পান্না আক্তার নামে এক নারী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আইন অনুযায়ী আমরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
পান্না আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জবানবন্দি দেয়ার পর আমার ভেতরে ভয় কাজ করছে। এ জন্য আমি থানায় জিডি করেছি।‘
এর আগে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে পান্না আক্তার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত পাঁচলাইশ থানার জিআরও এসআই শাহীন ভূঁইয়া বলেন, মুছার স্ত্রী পান্না আকতার মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে মিতু হত্যায় বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততার কথা পান্না আকতার জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা কৌশলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
তবে তিনি বলেন, ‘পান্না আকতার মিডিয়ায় বলে আসছেন মিতু হত্যায় বাবুল আকতার সম্পৃক্ত। তার স্বামী মুছাকে দিয়ে মিতুকে হত্যা করেছেন বাবুল। তিনি এত দিন মিডিয়ায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিই জবানবন্দিতে বলেছেন। আমি এখনো স্টেটমেন্টের (জবানবন্দি) কপি পাইনি। সেটি পেলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
গত ২৫ মে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে মোখলেসুর রহমান ইরাদ নামে এক ব্যক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
তিনি বলেন, এই মামলায় তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ইরাদ। এর আগে সাইফুল ইসলাম ও কাজী মামুন নামে দুই সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।
সেই হিসেবে মুছার স্ত্রী পান্না আকতারসহ মিতু হত্যা মামলায় এই পর্যন্ত চারজন সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিলেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে।
ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুল আকতারকে দায়ী করে আসছিলেন।
শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
গত ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
একই দিন দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া।