বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে নেয়া বিরোধীদলীয় নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ কে আইনে রূপান্তর করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
এ লক্ষ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে আনা বিরোধীদলীয় নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ভার্চুয়াল মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা যুক্ত ছিলেন সচিবালয় প্রান্ত থেকে।
সংবিধানে বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই। জিয়ার আমলে জারি হওয়া সেই অধ্যাদেশেই বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার পারিতোষিক ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে ‘বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
সে সময় বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এটা আপনার সামরিক আইনের মধ্যে যে আইন ছিল, তার মধ্যেই ছিল। এটি ১৯৭৯ সালের ছিল। অর্ডিন্যান্স ছিল।
এটা যেহেতু ওই সময়ের ছিল তাই সেটাকে চেঞ্জ করতে হয়েছে। ওইটা জাস্ট নতুন করে আইন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। মেজর কিছু চেঞ্জ করা হয়নি।'
আরও পড়ুন: জিয়া-এরশাদের সেনা আইন নিয়ে সিদ্ধান্ত জুনের মধ্যে
অধ্যাদেশে থাকা একটি ভুল ছাড়া আর তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নানা ঘটনার প্রবাহে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ওই বছরের ৭ নভেম্বর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হয়।
একপর্যায়ে ১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর সামরিক আইন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন সে সময়ের মেজর জিয়াউর রহমান।
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই জিয়া হয়ে যান রাষ্ট্রপতি। উর্দি পরা অবস্থাতেই ওই বছরের ৩০ মে ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দেন তিনি। বিস্ময়করভাবে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পড়ে ‘হ্যাঁ’র পক্ষে।
সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালের ৩ জুনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও জেতেন জিয়াউর রহমান। ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।
এই সময়ে জিয়াউর রহমান বেশ কিছু আদেশ ও অর্ডিন্যান্স জারি করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জিয়াউর রহমান ও তাকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে জারি করা সামরিক অধ্যাদেশগুলোর বিষয়ে আগামী জুনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সেই বৈঠকের পর এই প্রথম জিয়ার সেনা শাসনে জারি করা একটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এখানে শুধু একটাই রং এক্সপ্লেনেশন ছিল যে, ওনাদের ডেফিনেশনটা আর্টিকেল ৫৮ অনুযায়ী ছিল। ওইটা হবে আসলে আর্টিকেল ৫৬।'
কারণ ব্যাখ্যা করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'অ্যাপয়েন্টমেন্টটা হলো আর্টিকেল ৫৬ অফ দা কনস্টিটিউশন। কিন্তু ৫৮ হলো শূন্য পদ পূরণ। ওইখানে এটা হয়তো কেউ খেয়াল করে নাই। এবার আইনে এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আর্টিকেল ফিফটি সিক্স অনুযায়ী ওনাদেরকে ডিফাইন করা হচ্ছে।'