প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী ভুল করেছেন তা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
পাশাপাশি আগামীকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করেছেন তিনি।
সোমবার শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসাকে কেন্দ্র করে আটক ৫৪ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটা জাতিকে ধ্বংস করতে তার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা প্রয়োজন। দয়া করে এটি করবেন না। দরকার হলে শিক্ষার্থীরা দুই বা তিন শিফটে ক্লাস করবে। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন, না হলে জাতি সিকিমে পরিণত হবে৷ আর তার জন্য দায়ী হবেন আপনি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ বলেন, বিশ্বে দুটি জালিম সরকার আছে। একটি হলো নেতানিয়াহুর ইসরায়েল, অন্যটি নরেন্দ্র মোদির ভারত। তাই যখন নরেন্দ্র মোদি এসেছে তখন ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ন্যায্য কাজ করেছে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েল ও ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছে। ঘেরাও রাখার একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। একটি হলো বাংলাদেশকে সিকিমে পরিণত করা। অন্যটি আপনারা দেখতেই পেয়েছেন। পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে ।
‘প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না উনি কী ভুল করছেন। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, জাতিকে একত্রিতভাবে উন্নতির পথে আসতে। প্রধানমন্ত্রীকে আমি অনেকবার বলেছি, সবাইকে ডাকেন, একত্রিত করেন। কিন্তু তিনি ডাকেননি। তিনি সত্যকে ভয় পান৷’
গত ২৬ মার্চ মোদিবিরোধী আন্দোলনে শাপলা চত্বর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসমাইল হোসেন। সমাবেশে তার মা জাহানারা ইমাম বলেন, আমার ছেলে ছোট মানুষ। সবাই মিছিল করে। মিছিল করা অপরাধ না। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আমার ছেলের সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, তাকে মুক্তি দেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটি জালিম সরকার। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। দেশে সব চলে কিন্তু তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান বলেন, এই ‘খুনি’ হাসিনার পতন ছাড়া উপায় নেই। তরুণদের নেতৃত্বেই এই আন্দোলন করতে হবে।
রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য রাখাল রাহা বলেন, সাম্প্রদায়িক মোদি আসাতে সেদিন যারা প্রতিবাদ করেছেন তারা সঠিক কাজ করেছেন। আর তাদের যারা নির্যাতন করেছে তাদেরকে মানুষ রাষ্ট্রক্ষমতায় আনেনি। এই সরকারকে উৎখাত করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে হবে৷
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল না। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা ছাত্র। ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আমরা আগামীতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এই সরকার ৫৪ শিক্ষার্থীকে যত দিন মুক্তি না দেবে, তত দিন আমরা রাজপথে থাকব।
গণসংহতির জোনায়েদ সাকি বলেন, মোদির বিরোধিতা করার পরিপূর্ণ অধিকার এ দেশের জনগণের আছে। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ সরকার আলেম ওলামা ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করছে। বাংলার মানুষ আপনাদের ছাড়বে না। একদিন তারাই আপনাদের গলায় গামছা বেঁধে গদি থেকে নামাবে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকুন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে রেজা কিবরিয়া, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদসহ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নেন । জানা যায়, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির বিষয়ে নুরুল হক নুর, জোনায়েদ সাকি, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করবেন ।