লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার অভিযোগে শহিদুন্নবী জুয়েল নামক এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পোড়ানোর ঘটনার মামলায় এক আসামিকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার আসামি মো. শরিফুল ইসলামকে জামিন দেয়ার আদেশ দেয়।
জামিন আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন হাসান মাহমুদ খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
শহিদুন্নবী গতবছর ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে যান। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।
ওই মসজিদেই পবিত্র আল কোরআন অবমাননার অভিযোগে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন।
ততক্ষণে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় জাতীয় মানবধিকার কমিশনের তদন্ত দল গতবছর ১ নভেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানায়, মসজিদে কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া, জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিও কোরআন অবমাননার সত্যতা পায়নি।
জুয়েলকে হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে একটি মামলায় পাটগ্রাম উপজেলার সামসুদ্দিন ইসলামের ছেলে মো. শরিফুল ইসলামকে গত বছর নভেম্বরে শুরুতেই গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে।