গ্রাহকের কাছ থেকে নানা কৌশলে পিন এবং ওটিপি জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্টের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে ‘নগদ’ এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।
তারা প্রত্যেকেই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
এই তিন জন হলেন, রংপুরের মিঠাপুকুরের মো. আসাদুল ও আবু বক্কর সিদ্দিক এবং নরসিংদী সদরের খবিরুল ইসলাম।
ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ প্রাথমিক পর্যায়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল নম্বরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে গত বছরের দুই প্রান্তিকের উপবৃত্তি বিতরণ করেছে। কৌশলে এই টাকাই একটি চক্র হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
এপ্রিলের শুরুর দিকে রাজধানীর বনানী মডেল থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করে ‘নগদ’। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটিও।
‘নগদ’-এর অভিযোগ এবং অভন্তরীণ তদন্তের সূত্র ধরেই এই তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকি সেবা।
প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ‘এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স‘ লে: কর্নেল মো. কাওসার সওকত আলী (অব:) আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নগদ ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কেউ অপরাধ সংগঠনের চেষ্টা করলে অপরাধীকে আইনের কাছে সমর্পণ করতে সব সময়ই আমাদের সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে। সরকারি আর্থিক সেবা হিসেবে গ্রাহকের তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তা বিধান আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।’
যা বলল পুলিশ
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, অঞ্চলভেদে প্রতারকরা লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি জানান, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ছাত্রদের অভিভাবকদের ফোন করে। পরে কথা বলে ছাত্রদের সঙ্গে।
এর মাধ্যমে ছাত্রদের নাম, তারা কোন স্কুলে পড়ে সেটাও জেনে নেন। এরপর বলেন যে, তার একটি সমস্যা হয়েছে।
‘তোমাকে একটা ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি, তুমি ম্যাসেজটা পরে আমাকে পাসওয়ার্ড নম্বরটা বলো’- এই কথা শুনে যারা পাসওয়ার্ডটি দেয়, তখন তারা সেটি ব্যবহার করে এজেন্টের কাছে গিয়ে ক্যাশ আউট করে নিত।
তিনি জানান, যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের দুই জনকে রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আর একজনকে নরসিংদী সদর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নরসিংদী সদরের যিনি ধরা পড়েছেন তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী।
পুলিশের ভাষ্য, উপবৃত্তির টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে কি না, অনভিজ্ঞের কাছ থেকে সেটি তিনি কৌশলে জেনে নিতে। আবার কৌশলে পিন নম্বরটা নিয়ে টাকা তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নিয়ে বলতেন টাকা জমা হয়নি।
রংপুরের যারা ধরা পড়েছেন, তাদের একজন নগদের এজেন্ট। তিনিও কৌশলে চাত্রদের পিন নম্বর নিয়ে নিতেন। টাকা জমা হলেই তা সরিয়ে নিতেন।
মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতারকদের উদ্দেশ্যে আমরা একটি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছি। সেটা হলো, আপনাদের ট্রেস আউট করা যাবে না এটা ভুল ধারণা। প্রতারকদের আইনের আত্ততায় আনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ যথেষ্ট সক্ষম এবং আমাদের একটা স্পেশাল ইউনিট আছে- ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম ইনভেন্টিগেশন টিম। আমাদের টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’