চলমান লকডাউন বা বিধিনিষেধ কবে নাগাদ উঠবে, এ ব্যাপারে ‘স্পষ্ট কিছু’ বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বলেছেন, সরকারের আপাতত লক্ষ্য করোনাভাইরাসের শনাক্তের হার ৫ শতাংশে নিয়ে আসা।
সচিবালয়ে রোববার দুপুরে চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
‘সংক্রমণকে আমরা চাচ্ছি ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য। ৫ শতাংশে চলে এলে বলা হয় পরিস্থিতি স্বস্তিজনক অবস্থায় আছে এবং সেটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সে রকম একটি অবস্থার মধ্যে আমরা নিতে চাই।’
চলমান বিধিনিষেধ কবে নাগাদ উঠতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ বলেন, ‘আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
৫ শতাংশে না নামা পর্যন্ত কি লকডাউন কার্যকর থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবেন। বিকল্প ব্যবস্থাগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সংক্রমণ পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাদের সে ফ্রিডম দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের অনলাইন পরীক্ষা, অনলাইন ক্লাস চলমান আছে।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। তা ছাড়া তারা যখন স্কুলে আসবে, সংক্রমণ হুট করে আবার বেড়ে যেতে পারে।’
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছেন বলে জানালেন ফরহাদ হোসেন। বলেন, ‘প্রত্যেকেই সচেতন হয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে আসছেন না। এটি অবশ্য ভালো লক্ষণ। তারপরেও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
সংক্রমণের মাত্রা এখন ৮ থেকে ৯ শতাংশের ওপরে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি সবকিছু বিবেচনা করে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শক্রমে সরকার আরও এক সপ্তাহ চলমান বিধিনিষেধ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সরকারের জরুরি সেবা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি অফিস যেগুলো জরুরি সেগুলো খোলা আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পরিচালনা করছি।’
সীমান্তবর্তীসহ কিছু কিছু জেলায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপের প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলার বিষয়ে একটি প্রস্তাব এসেছে। সেটা নিয়ে এখন আমরা চিন্তাভাবনা করছি। পরবর্তী সময়ে আমরা হয়তো জানাব কী করা যেতে পারে।
‘সংক্রমণ বাড়ার কারণে সেখানে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। সংক্রামক ব্যাধি নির্মূল আইনের আলোকে যদি কোথাও সংক্রমণ বাড়ে, তাহলে তারা কিন্তু ডিজি হেলথের কাছে সুপারিশ করতে পারে এবং সেই সুপারিশ অনুযায়ী ডিজি হেলথ সেটাকে অনুমোদন দেবেন।’
এ সময় সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোর- এই পাঁচটি জেলার কথা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আমরা সংক্রমণ বেশি দেখছি। সাতক্ষীরার যে জায়গাগুলো বেশি আক্রান্ত সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করব। এমন হতে পারে যে সাতক্ষীরার সব অঞ্চল না, যেখানে বেশি সংক্রমণ সেখানে করার চেষ্টা করব। যাতে করে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
‘জীবন-জীবিকার বিষয়টি সরকার সব সময় খেয়াল রাখছে। যত ছোট করে করলে সেটা আমাদের ফলপ্রসূ হয়, কার্যকর হয়, আমাদের জীবন-জীবিকাকে প্রভাবিত করবে না, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতের সঙ্গে ৩৬টি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের জন্য নেয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত আরও দুই সপ্তাহ চলমান থাকবে।
‘আমাদের তো অবশ্যই সেক্রিফাইস করতে হচ্ছে। পুরোটা যদি আমরা স্বাভাবিক অবস্থানে আসতে পারতাম তাহলে... কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে ৫ শতাংশে আসার পরে, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কাজকর্মগুলো করতে পারি।’