করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী আট জেলা লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। শিগগিরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, লকডাউনের তালিকায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলা।
শনিবার বিকেলে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জামিল ফয়সাল বলেন, ‘গতকালকের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে, ভারতের সীমান্তবর্তী আট জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেসব এলাকায় লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে।
‘আমাদের চিন্তার মধ্যে ঢাকা এখন নাই। ঢাকা মোটামুটি করোনা নিয়ন্ত্রণে। এখন সিলেট, কক্সবাজার, ফেনী আমাদের টার্গেটে রয়েছে। সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে এগুলোতেও পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হবে।’
জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউনের সুপারিশ কবে নাগাদ আসতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবু জামিল বলেন, ‘গতকাল আমরা সুপারিশ করেছি, এই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবিনেট সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। আশা করছি খুব জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
সারা দেশে চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশও রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকায় লকডাউন চলছে কি না সেটা বোঝা যায় না। লকডাউন বা স্বাস্থ্যবিধি মানা কোনোটাই হচ্ছে না এখানে।
‘সারা দেশে লকডাউন না দিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি ও সীমান্তবর্তী এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
দেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। সেই বিধিনিষেধ আরও দুই দিন বাড়ানো হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেয়া হয় কঠোর লকডাউন। এরপর সেটা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। চলমান লকডাউন রোববার মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা।
চলমান লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে সরকার থেকে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তা অনুমোদন পেলে রোববারই লকডাউন বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন আসতে পারে।
চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউনে গা নেই মানুষের। স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে সবকিছু। তাই যেসব জেলায় করোনার ঝুঁকি বেশি, সেসব জেলায় কঠোর লকডাউন নিশ্চিতের সুপারিশ এলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে।
ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় এবং দেশটিতে অতি ছোঁয়াচে করোনার নতুন ধরনের কারণে দেশটির সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো নিয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গত ২৫ মে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘কঠোর’ লকডাউন চলছে। লকডাউন কার্যকরে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। শহরের সব প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
যারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন, তাদের পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বের হয়েছেন, তাদের ঘরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এক কথায় জেলাটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।