করোনা সংকটে আদালতের কার্যক্রমে স্থবিরতায় ভয়াবহ মামলার জট তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে দ্রুত দেশের সব আদালত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।
রাজধানীর বসুন্ধরায় শনিবার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
খন্দকার মাহবুবের আশঙ্কা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দ্রুত সব আদালত খুলে না দিলে বর্তমানে যে অবস্থা আছে তা যদি চলতে থাকে তাহলে বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে। আর বিচারের প্রতি যদি মানুষের অনীহা আসে তাহলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিশন গঠনের তাগিদ দেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান। বলেন, ‘করোনার পূর্বেই আমাদের বিচার বিভাগে মামলার সংখ্যা নিয়ে একটা সংকটপূর্ণ অবস্থায় ছিল। করোনার পরে দীর্ঘ দিন নিম্ন আদালত উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে সেই সংকট একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
‘বর্তমানে গণপরিবহণসহ সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগ এমন একটা অবস্থায় রয়েছে যে, মানুষ বিচার না পেয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছে। আমি মনে করি, দীর্ঘ দিন যদি এ অবস্থা চলে আর বর্তমানে মামলার যে জট আছে তা দ্রুত যদি নিষ্পত্তি না করা হয়, তাহলে মানুষের বিচারের প্রতি অনীহা হবে। বিচারের প্রতি আস্থা না থাকার ফলে একটা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর পরামর্শ, বর্তমান অবস্থায়ও মোটামুটি সুরক্ষা নিয়ে যাতে আদালতের কার্যক্রম চালু রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। পেশাগত কাজে যে আইনজীবীরা আদালতে যান তাদেরকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক মামলা। এমনকি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও দীর্ঘ দিন ধরে কনডেম সেলে রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটা কমিশন করা উচিত। তারা সুচিন্তিত মতামত দেবেন কীভাবে মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। নতুবা এখন যে অবস্থা আছে সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে।
‘বর্তমান অবস্থার মধ্যে সব আদালতগুলোকে সুরক্ষা নিয়ে চালু করতে হবে। যেহেতু গণপরিবহনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চলতেছে, বিচার বিভাগকে সঙ্কুচিত করা উচিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, কোর্ট ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিক করা হয়, তাহলে মানুষের ভিড় অনেকাংশে কমে যাবে। নিম্ন আদালতে এত মানুষের ভিড়, এটার তো প্রয়োজন নেই। আইনজীবীর মাধ্যমে যারা কেবলমাত্র মামলার আসামি, তারাই হাজিরা দেবেন।
বিচারক সংকট নিয়ে তিনি বলেন, আপিল বিভাগে তিনটা বেঞ্চ করতে পারে, বর্তমানে সেখানে দুইটা বেঞ্চ আছে। দেশে জন সংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই অনুপাতে বিচারক সংখ্যা অনেক কম।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব আদালত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব
তার অভিযোগ, বিচার বিভাগের প্রতি যতটা গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যবশত ততটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তারই ফলে বিচার বিভাগ এখন সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়ার মত অবস্থায় আছে। মানুষ কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না। এজন্যই মামলার জট কমাতে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন করা দরকার।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব আদালত। এরপর গত বছরের মে মাস থেকে আইন সংশোধন করে সীমিত পরিসরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালত চালুত হয়। এরপর করোনা সংক্রমণের হার কমে আসলে আদালত পর্যায় ক্রমে খুলতে থাকে। এরপর চলতি বছরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আবারও আদালত বন্ধ করা হয়। অবশ্য সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালিত হয়ে আসছে।
এ অবস্থায় বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আদালত খোলার দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনও করা হয়েছে। আইনজীবীদের আবেদনের পরি প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি বুঝে আদালত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।