পৃথিবীর সব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে বাংলাদেশ আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেমন নিজের দেশকে ভালোবাসি, তেমনি যেখানেই নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ আছে আমরা তাদের পাশে আছি। শোষিত-বঞ্চিত মানুষ আছে তাদের পাশে আছি।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তার যে কথা ছিল তিনি কিন্তু বিশ্ব শান্তির জন্যই কাজ করেছেন। তিনি সব সময় চাইতেন সারা বিশ্বে একটা শান্তি ফিরে আসুক এবং শান্তির মাধ্যমে উন্নতি হোক। শুধু নিজের দেশে না প্রতিবেশী দেশসহ সারা বিশ্বে যেন শান্তি ফিরে আসে সেটাই তিনি চেয়েছিলেন। জাতিসংঘে ভাষণে, বাংলাদেশের সংবিধানে এটা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। আমরাও তার সেই পদাঙ্কই অনুসরণ করে চলছি।’
শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা জানি যে আপনজন পরিবার পরিজন সবাইকে ছেড়ে এত দূরে গিয়ে থাকা… যেসব এলাকায় আপনারা কাজ করছেন অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়।
‘সেখানকার পরিবেশ ভিন্ন, বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ভিন্ন পরিবেশে আপনারা যে কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ করে যাচ্ছেন মানবতার জন্য, কাজ করে যাচ্ছেন মানব কল্যানের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা শান্তি রক্ষার জন্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের বাঙালিরা যেখানেই যাচ্ছে সেখানে একদিকে যেমন শান্তি রক্ষায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে; অপরদিকে সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে ওখানকার সাধারণ মানুষের সাথে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। তাদের বিশেষ করে সামাজিক যে চাহিদা অনেকগুলো কিন্তু আপনারা নিরুপণ করে দিচ্ছেন। অত্যন্ত দরদী মন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
‘বাঙালি জাতি হিসেবে এটা মনে হয় আমাদের বৈশিষ্ট্য, পরকে আপন করে নেয়া। তাদের ভালো মন্দ দেখা, তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া। এই কাজগুলো আপনারা করে যাচ্ছেন। শান্তিরক্ষী হিসেবে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকে। তার বাহিরেও এই মানবিক দিকগুলো যে ফুটে উঠছে এটিই সবচেয়ে বড় কথা। এ জন্য সত্যিই আমি আপনাদের নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনাদের এই মানবিক গুণের জন্যই আমি মনে করি বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী নেয়ার চাহিদাটা বেশি।’
এ সময় বিভিন্ন মিশন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকা বাংলাদেশি সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী নই, জাতির পিতার মেয়ে। তাই আমার ওপর আপনাদের অধিকার আছে। তাই যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় নিহত ১২ জন সদস্যের পরিবার ও আহত ১৩ সদস্যক আহতকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ক্রেস্ট প্রদান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
১৯৮৮ সালে ইরাকে শান্তিরক্ষী পাঠানো মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। গত তিন দশকে সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর এক লাখ ৬৭৪ জন সদস্য ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশে ছয় হাজার ৭৪২ জন সদস্য শান্তি রক্ষায় মোতায়েন আছে।