সুইসাইড নোট লেখা এক তরুণী পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ আপনাদেরকে ফেরেশতা করে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।’
পুলিশের চেষ্টায় আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এবং প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর নিজ উপলব্ধি থেকে তিনি এ কথা লিখেছেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, মেয়েটি গত রাতেই সুইসাইড নোট লিখেছিলেন। পরে পুলিশের বার্তা পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মেয়েটি লিখেছেন, ‘গত রাতেই সুইসাইড নোট লিখেছিলাম, হয়তো রাতেই কিছু করে ফেলতাম। আপনাদের মেসেজ পেয়ে ভরসা পেয়েছি।’
পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে এসব কথা লিখেছেন এই তরুণী।
সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছিলেন, তার সঙ্গে এক যুবকের বহুদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ছেলেটি কলেজশিক্ষক। বিয়ের আশ্বাসে তারা অনেক গভীরভাবে মিশেছেন। যুবকের ইচ্ছায় তিনি গর্ভপাত করাতেও বাধ্য হয়েছেন।
তাদের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকার সবাই জেনে গেছে। এই মুহূর্তে ছেলেটি তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন। কোনো মূল্যেই ছেলেটি তাকে বিয়ে করবেন না। ছেলেটির পরিবারও মেনে নেবে না। এলাকার গণ্যমান্য অনেকের শরণাপন্ন হয়েছেন।
প্রভাবশালী হওয়ায় ছেলের পরিবার কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। বিয়ে করছি, করব বলেও পেরিয়েছে অনেক বছর। স্থানীয় সব উপায়ের শরণাপন্ন হয়েও কোনো সমাধান বা বিচার পাননি। হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ সময়েই এক পরিচিত ব্যক্তির পরামর্শে পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে লেখেন তিনি। জানান, তিনি বাঁচতে চান। চান সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে।
মিডিয়া উইং প্রাথমিকভাবে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। তাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে উৎসাহ দেয়। নানাভাবে কাউন্সেলিং করে।
পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার ওসি মো. রওশন কবিরকে নির্দেশনা দেয় বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে উপযুক্ত আইনি সহায়তা দিতে। সার্কেল এএসপি মো. সুমন রেজাকে পরামর্শ দেয় বিষয়টি তদারকি করতে।
নাগেশ্বরী থানার ওসির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সার্কেল এএসপির তত্ত্বাবধানে বিষয়টির দ্রুত সমাধানের পথ সুগম হয়। এলাকার চেয়ারম্যানসহ অন্য জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে ও উপস্থিতিতে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন ওই তরুণী ও কলেজশিক্ষক।
পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং সতর্ক এবং সচেষ্ট ছিল, যেন উভয় পক্ষের মধ্যে সব ধরনের ভুল-বোঝাবুঝি দূর হয় এবং একটি আত্মোপলব্ধি ও সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় কুড়িগ্রামের এসপি সার্বিকভাবে পাশে ছিলেন।
সেই তরুণী পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন, ‘মহান আল্লাহর দরবারে শতকোটি শুকরিয়া। আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। ভাবতেই খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। স্যার, আল্লাহ আমার সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দেননি। আর এত কিছু সব সম্ভব হয়েছে শুধু আপনাদের জন্য।
‘আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নাই। তবে আমি সারা জীবন আপনাদের জন্য দোয়া করব। আল্লাহ আপনাদেরকে ফেরেশতা করে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।... আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে সুখে সংসার করতে পারি।’