বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আব্বুকে ফিরিয়ে দেন’

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ১৪:০৬

‘আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনেন নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।’

‘আব্বু হারিয়ে যাবার পর ছোট ভাই দুই মাস ঘুমাতে পারে নাই। আম্মু কিছু বলতে পারত না। শুধু বলত, ঘুমাও, আব্বু এসে কলিং বেল বাজাবে। এভাবে তো দুই বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু আব্বু তো কলিং বেল বাজায় না।’

কথাগুলো বলছিল ১৪ বছর বয়সী আনিশা ইসলাম। দুই বছর আগে তার বাবা কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেনকে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি জানান স্বজনহারা শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতারা।

প্রতিবছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘গুম সপ্তাহ’।

আনিশা বলে, ‘আমার ভাই তখন আরও ছোট ছিল। ও ঘুমাতে পারত না। আম্মু সারা দিন কান্নাকাটি করত। রাতে ভাই না ঘুমালে আম্মু বলত ঘুমিয়ে যাও। বাবা আসবে। দেখবা কলিং বেল বাজাচ্ছে।’

কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলে, ‘আপনি একবার দেখেন। আমরা কেউ মিথ্যা বলিনি। আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আব্বু ছাড়া আমরা কীভাবে থাকব।’

আনিশার মতো সাথিকা সরকার এসেছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া সাথিকার বাবা মো. সোহেল আট বছর আগে গুম হয়েছেন। এখনো তার খোঁজ পায়নি পরিবার।

সাথিকা বলে, ‘আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনেন নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।’

ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন গুম হওয়া সন্তানের খোঁজ চাওয়া মায়েরাও। তাদের আর্তনাদে হুট করেই যেন প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সন্তান হারানো বেদনা কীভাবে কাটাবেন বুঝতে পারেন না তারা।

গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে, এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।’

‘গুম হওয়া’ মনির হোসেনের ভাই মো শহিদুল্লাহ বলেন, ‘২০১০ সালে আমার ভাইকে তুলে নেয়া হয়। ছয় মাস ধরে র‍্যাবের পেছনে ঘুরেছি। কোনো খোঁজ দিতে পারে নাই। মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়নি প্রথমে। পরে একটা মামলা করেও জানি না সেই মামলার কী অবস্থা। আমার ভাইয়ের কী অপরাধ? তাকে কি মেরে ফেলা হয়েছে? তাহলে অন্তত তার কবরটা আমাদের দেখিয়ে দিক।’

লামিয়ার বাবা কাউসার হোসেন আট বছর আগে গুম হয়েছেন। লামিয়া তখন মায়ের সঙ্গে বরিশালে ছিল। ছোট লামিয়া তখন জানত না গুম কী জিনিস। এখন একটু বুঝতে পারে, বাবা নেই।

লামিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আব্বু অনেক দিন নেই। আম্মু কিছুই বলতে পারে না। শুধু কান্না করে। এখানে এসে দেখি আমার মতো অনেকের আব্বু নেই। আব্বুকে আমি একটু দেখতে চাই।’

‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

তিনি জানান, দেশে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন গুম হয়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ না পেয়ে অনিশ্চিত ও দুঃসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। সরকার কখনও পদক্ষেপ নেয় না। কীভাবে দিন পার করবে পরিবারগুলো।

এ বিভাগের আরো খবর