করোনাভাইরাসের টিকাসহ জীবন রক্ষাকারী অন্য ওষুধ তৈরিতে প্রযুক্তির সহজ স্থানান্তর, বাণিজ্যিক সহায়তা ও মেধাস্বত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্তি চেয়েছে বাংলাদেশ। এলডিসিভুক্ত সব দেশের জন্য এই প্রক্রিয়া দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল বক্তৃতায় শুক্রবার সকালে তিনি এলডিসিভুক্ত দেশের পক্ষে এ সুবিধা চান।
মোমেন এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো বিষয়ে আলোচনার প্রধান বক্তা ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলডিসিভুক্ত দেশে করোনার টিকা সুলভ মূল্যে সরবরাহের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে টিকার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। এলডিসি দেশগুলো যেখানে টিকা পাচ্ছে না, সেখানে উন্নত দেশগুলো অপ্রয়োজনে বিশাল মজুত গড়ে তুলছে। যা টিকার অপব্যবহার।
‘টিকা ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্বের বেড়াজাল থেকে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো এলডিসি দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক-বাণিজ্যিক সহায়তা দিক।’
তিনি বলেন, “এলডিসির জন্য ‘ইস্তাম্বুল প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন ২০১১’ বিশ্ব বাণিজ্যে এলডিসি দেশগুলোর অংশীদারত্ব এক দশকে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছরে এলডিসিভুক্ত দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশীদারত্ব বাড়ার পরিবর্তে বরং কমে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলডিসির দেশগুলোর সুবিধায় বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের জন্য সহায়তার যে ভূমিকা নিতে পারে তা তিনি তুলে ধরেন।
তিনি আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা উল্লেখ করেন, যা এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর বিশ্ব বাণিজ্যে অংশীদার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই সঙ্গে তিনি এ ক্ষেত্রে বাধাগুলোকেও চিহ্নিত করেছিলেন, যে লক্ষ্য এখনও পূরণ সম্ভব হয়নি।
মোমেন তার বক্তব্যে করোনা মহামারি ও এলডিসির অর্থনীতিতে এর প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি ডিজিটাল অবকাঠামোগত ক্ষেত্র বিশেষত, ই-বাণিজ্য ক্ষেত্রে এলডিসি দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি মহামারি সময়ে পরিষেবা খাত থেকে এলডিসি দেশগুলোর সেবা খাতে আয় মারাত্মক হারে কমে যাওয়া ও বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে এখন অনেক এলডিসি দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকিতে পড়েছে।
তিনি এ ক্ষেত্রে এলডিসি থেকে নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল ভ্রমন চালু করারও আহ্বান জানান।
মোমেন এলডিসির অনুকূলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রিপরিষদ সভার সব সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানান। শুল্কবহির্ভূত ও অন্য বাধা অপসারণেরও দাবি জানান।
তিনি এলডিসির দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘উন্নত দেশ ও এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে ডিজিটাল বিভাজনকে মোকাবিলার জন্য ডাব্লিউটিও বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’