গ্যাস-সংযোগ পেতে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডে ২০০৯ সালে আবেদন করেছিল সিলেটের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা অ্যান্ড কোং। ওই বছরই গ্যাস-সংযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
তবে বিশেষ বিবেচনায় শিল্প খাতে সংযোগ দেয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ফিজা কোং-এর আবেদনকে অনুমোদন দেয়। অথচ জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ এই আবেদনটি ঝুলিয়ে রাখে। অবশেষে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে গত বছর গ্যাস-সংযোগ পায় প্রতিষ্ঠানটি।
ফিজা গ্যাস-সংযোগ পেলেও এখনও সংযোগ পায়নি আরেক ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফুলকলি ফুড প্রোডাক্ট। সিলেটের খাদিমনগর বিসিকের এই প্রতিষ্ঠানটির আবেদন আটকে আছে জলালাবাদ গ্যাসে।
জালালাবাদ গ্যাস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির কার্যনির্বাহী স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় ফুলকলির আবেদনটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে মত দেন স্ট্যান্ডিং কমিটির ছয় সদস্য। কেবল কমিটির সদস্য ও জালালাবাদ গ্যাসের উত্তরাঞ্চলের বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ কে এম শামসুল আলম এই সিদ্ধান্তে একমত হননি।
অভিযোগ রয়েছে, বিপণন বিভাগের এই কর্মকর্তা গ্যাস-সংযোগের আবেদনগুলো নিজের টেবিলে অহেতুক আটকে রাখেন। আবেদনকারীদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য তিনি এই কৌশল নেন। এ ছাড়া গ্রাহক ও ঠিকাদারদের হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে শামসুলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ জালালাবাদ গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আব্দুল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে শামসুলকে পরিচালন (অপারেশন) বিভাগে বদলি করা হয়। তবে এই আদেশের পরও পরিচালন বিভাগে যোগ দেননি শামসুল। বদলির মাত্র পাঁচ দিন পর ১ এপ্রিল একই ব্যক্তির সই করা আরেক অফিস আদেশে শামসুলকে উত্তরাঞ্চলের বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক পদে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জালালাবাদ গ্যাসের একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, শামসুল আলমের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখা ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ আনার পর তাকে বদলি করা হয়েছিল। তবে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি নতুন দায়িত্বে যোগ না দিয়েই পাঁচ দিনের মধ্যে পুরোনো দায়িত্বে ফিরে আসেন। শামসুলের বিরুদ্ধে জালালাবাদ গ্যাসের অভ্যন্তরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে গ্রাহক ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ করেছেন তারা।
জানা যায়, গত ডিসেম্বরে জালালাবাদ গ্যাসের ঠিকাদাররা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন আবেদনের ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ করেন। এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আটকে থাকা আবেদনগুলোর একটি তালিকা দেন তারা।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে এই অভিযোগ জানানোর পরই শামসুলকে বদলি করা হয় বলে জানা গেছে।
তবে জালালাবাদ গ্যাস ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরম দ্যূতি দাস প্রদীপ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংযোগ, পুনরায় সংযোগ আবেদনগুলো দীর্ঘদিন আটকে থাকার বিষয়ে আমরা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়নি।’
শামসুলের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখা ও সিন্ডিকেট তৈরি করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ঠিকাদার মৌখিকভাবে এমনটি বলেছেন। তবে কেউ লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ দেননি।’
বদলির পাঁচ দিনের মধ্যে স্বপদে বহাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
সিলেটের বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা ফয়সল আহমদ। ২০১৮ সালের মে মাসে তার আবাসিক সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে জালালাবাদ গ্যাস। নিয়মানুযায়ী পুনরায় সংযোগের আবেদন করেন তখনই। কিন্তু আড়াই বছর পেরোলেও পাননি সংযোগ। নীতিমালার দোহাই দিয়ে তার সংযোগটি আটকে দেয়া হয়েছে।
একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শামসুল আলম সংযোগের আবেদনগুলো নিজের টেবিলে আটকে রাখেন। এ রকম অন্তত ৫০টি ফাইল আটকে আছে। তিনি জালালাবাদ গ্যাসের দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তিনি অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায় না।’
সিলেটের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজমহল সুইটস, স্বাদ, নিশিতা ফুড, ফুলকলি, প্রিমিয়াম ফিস, হক ফুডসের আবেদন তার টেবিলে আটকে আছে বলে জানা গেছে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জালালবাদ গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক বিপণন (উত্তর) শামসুল আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।