ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের উপকূল অতিক্রম করার পরও কাটেনি এর প্রভাব। ঝড়টি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এমন বাস্তবতায় উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সতর্কবার্তায় বলা হয়, উত্তর ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে বুধবার সকাল ৬টায় গভীর নিম্নচাপ আকারে উত্তর ওড়িশা ও সংলগ্ন ঝাড়খন্ড এলাকায় অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস নিউজবাংলাকে বলেন, ইয়াসের ফলে বায়ুর চাপের পরিবর্তন হয়েছে। বায়ুচাপ পার্থক্যের কারণে উপকূলে এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভারতের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৯টার কিছু পরই ওড়িশার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে আছড়ে পড়ে ইয়াস। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার। তবে ইয়াসের প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইয়াসের আগমনের আগে থেকেই দেশের উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখানো হয়েছিল। এটি আজও বহাল থাকবে।
ঝড়ের প্রভাবে দেশে বুধবার ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বগুড়ায়।
ঢাকায় সারা দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও তার পরিমাণ অধিদপ্তর থেকে সামান্য বলা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা সব জেলাতেই প্রায় ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি কমেছে। এ সময় সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে। সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
‘সাগর উত্তাল রয়েছে। আস্তে আস্তে এই অবস্থা কেটে যাবে। এরপর আমরা সতর্কসংকেত উঠিয়ে নিব।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গা এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।