ইসরায়েলের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশের দেয়া ত্রাণ বুধবার হস্তান্তর করা হবে। আজই ত্রাণ পাঠিয়ে দেয়া হবে ফিলিস্তিনে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকালে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদানের কাছে জরুরি মানবিক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তর করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তার প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রতি অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এই ঘটনার সুবিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৭ মে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে টেলিফোন করে সহায়তা পাঠানোর কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি সেদিন ইউসুফ রামাদানকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের সমর্থন সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি রয়েছে। বাংলাদেশ শিগগিরই ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাঠাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান সে সময় বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সব বৈশ্বিক সংস্থা এবং বিশ্বের সবার কাছে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও দোয়া চাই। ইসরায়েলি নারকীয় বাহিনী ফিলিস্তিনের মাটিতে যে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে, তা দৃশ্যমান। ইসরায়েল যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তা-ও বিশ্ববাসী দেখছে।
‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণের ঘরবাড়ি অবৈধভাবে দখল করে তাদের বাস্তুচ্যুত করছে। ফিলিস্তিনের জনগণ বিশ্ববাসীর কাছে এই জঘন্য ঘটনার বিচার চায়।’
প্রতি উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তা বিশ্বের কোনো আইনেই মেনে নেয়া যায় না। ইসরায়েলের এই হত্যা এবং মানবাধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশ্বের শান্তি এবং প্রগতির জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
ইসরায়েলের টানা ১১ দিনের ধ্বংসযজ্ঞের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল সেখানে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে বাধা দেয়ায় মানবিক পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট হয়ে গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার পাঠানো ত্রাণবাহী অনেক ট্রাক।
সম্প্রতি ইসরায়েলের বিভিন্ন দখলদার প্রতিষ্ঠানের করা মামলায় শেখ জারাহ এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু হয়। এর জেরে চলতি মাসের শুরুতে সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনিরা।
উত্তেজনা গড়ায় পবিত্র আল-আকসা মসজিদ পর্যন্ত। রমজান মাসজুড়ে সেখানে দফায় দফায় অভিযান চালায় ইসরায়েলের সেনারা।
সংঘর্ষে আহত হন কয়েক শ মুসল্লি। এমন পরিস্থিতিতে গাজার শাসক দল হামাস হুঁশিয়ারি হিসেবে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ে।
২০১৪ সালের পর চলতি মাসের প্রায় দুই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী আক্রমণের শিকার হয় অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচিত হামাস ও তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ইসরায়েলের বাহিনীর এসব বিমান হামলায় প্রাণ গেছে ৬৫ শিশুসহ ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জন নারী রয়েছেন। আহত দুই হাজারের বেশি। ভিটেমাটি হারিয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ।
সহিংসতার ইতি টানতে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলেও আল-আকসায় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।