জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বকে আশান্বিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভোলকান বোজকির।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া, এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে জলবায়ু ইস্যু ও উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বকে আশান্বিত করছে।’
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা দিতে দুই দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর করছেন ভোলকান বোজকির।
এর অংশ হিসেবে বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার। এদিনই পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বোজকির।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই অবস্থায় মুক্ত গণমাধ্যম ও এর স্বাধীনতার আরও অবারিত থাকা উচিত।’
এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে অংশ নেন বোজকির।
সাক্ষাতের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।ভোলকান বোজকিরকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, তিনি বলেছেন বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্রাজুয়েশনের একটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের মানুষ খুব সাহসী এবং তারা এটি এগিয়ে নেবে।
প্রেস সচিব জানান, দুই নেতার সাক্ষাতে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা এবং করোনাভাইরাস মহামারিসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বোজকির। তিনি বাংলাদেশের লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রশংসা করেন।জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত, কেননা তিনিই প্রথম সংসদে ১০ শতাংশ নারী কোটা বরাদ্দ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সমাজের সর্বক্ষেত্র, বিশেষ করে রাজনীতি এবং প্রশাসনে নারীর ক্ষতায়নে কেবল তার পদাঙ্কই অনুসরণ করছি। সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা বর্তমানে একজন নারী।’
ইউএনজিএর প্রেসিডেন্ট জানান, এ বছরের সাধারণ অধিবেশন সরকারপ্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বছর ইউএনজিএতে ওয়ান প্লাস ওয়ান পারসন প্রতিনিধিদল প্রতিটি দেশ থেকে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছি।’
ইউএনজিএর প্রেসিডেন্ট ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের সাহসী ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার পাশে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বলার মতো কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি।
‘আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি, কিন্তু সাম্প্রতিক যা অগ্রগতি তাতে পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার ভাসানচরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। যদিও ১৮ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দ্বারা অনুপ্রাণিত, যিনি সব সময় বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বৈঠকে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষের জানমাল রক্ষায় এবং অর্থনৈতিক খাতে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউএনজিএর প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা মহামারি চলার সময় সোশ্যাল সেফটি নেট কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি এবং তার বোন যে বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, সেটিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে অটিজম এবং নিউরো ডিভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার-বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।