রংপুরের আলোচিত স্থানীয় মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট।
তার নাম আব্দুর রহমান চান্দু মিয়া। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য।
২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরের স্থানীয় একটি মাজারের খাদেম রহমত আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রায়ে আব্দুর রহমানসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন রহমান। দীর্ঘ ছয় বছর পর পলাতক রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাভারের গেন্দা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এন্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া ও অ্যাওয়ারনেস বিভাগের পুলিশ সুপার মোহম্মদ আসলাম খান।
আসলাম খান বলেন, নিহত খাদেম রহমত আলী সুরেশ্বরী তরিকা পালন করতেন। নিজ বাড়ির পাশে তার মা-বাবার কবরকে মাজার বানিয়ে মাজার ও মসজিদসংলগ্ন একটি দরবার শরিফ ঘর তৈরি করেছিলেন রহমত আলী।
সেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার সুরেশ্বরী তরিকত অনুসারীদের নিয়ে জিকির করতেন। জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা রহমত আলীকে একজন ভণ্ড পীর, শিরককারী মনে করতেন। দিন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। রহমত আলীর কাউনিয়া থানার চৈতার মোড়ে একটি ওষুধের দোকানও ছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাতজন জেএমবি সদস্য রহমতকে হত্যার উদ্দেশ্যে চৈতার মোড় বাজার এলাকায় অবস্থান নেন। রহমত বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেন জেএমবির সদস্যরা।
হত্যায় সরাসরি অংশ নেন জেএমবির ইসাবা গ্রুপের (কিলিং মিশনের গ্রুপ) সদস্য আব্দুর রহমান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
বিচার-প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালে আদালত রায় দেয়। এ মামলায় আব্দুর রহমানসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন আব্দুর রহমান।
পুলিশ সুপার আসলাম খান জানান, আব্দুর রহমান একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নানা ছদ্মবেশে দীর্ঘ ছয় বছর আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। আত্মগোপনে থাকার সময় তিনি নিষ্ক্রিয় থাকলেও জেএমবি অনেক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন বলে নিশ্চিত হয়েছে এন্টি টেররিজম ইউনিট।
কুমিল্লার শ্বশুরবাড়ির সূত্র ধরে আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রংপুরের কাউনিয়া থানার পুলিশের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার আসলাম খান।
ওই হত্যাকাণ্ডে আব্দুর রহমানের সঙ্গে অন্য যে জঙ্গিরা অংশ নিয়েছিলেন, তারা হলেন মাসুদ রানা, দর্জি বিজয়, লিটন মিয়া, ইসহাক আলী, সাখাওয়াত হোসেন ও সারোয়ার হোসাইন।
তাদের মধ্যে লিটন মিয়া, দর্জি বিজয় ও সাখাওয়াত হোসেন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
রংপুরে খাদেম রহমত আলীকে হত্যার এক মাস আগে হোশি কুনিওকে হত্যা করে তারা।